অপরাধ-আইন-আদালত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হলে কখন থেকে হবে এবং হওয়া উচিত-আপিল বিভাগ

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৫ , ৫:০৭:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ত্রয়োদশ সংশোধনী রিভাইভাল (পুনরুজ্জীবিত) হলে তা কখন থেকে ইনভোক (কার্যকর বা বাস্তবায়ন) হবে—এমন প্রশ্ন রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।তিনি বলেছেন,এটি পুনরুজ্জীবিত হলে কখন থেকে হবে এবং হওয়া উচিত?আর পুনরুজ্জীবিত হলে নতুন যাত্রায় এটার স্থায়িত্ব কীভাবে নিশ্চিত হবে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন।শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন,এ ক্ষেত্রে নতুন ধারণা, অভিমত ও পর্যবেক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের ওপর কোনো বিধিনিষেধ ও প্রতিবন্ধকতা নেই।প্রগতিশীলতা হলো গতিশীল,যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে আপিল বিভাগ রায় দেন।এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ ‘লিভ’ মঞ্জুর করে আদেশ দেন।এখন আপিলের ওপর শুনানি হবে।এ জন্য আগামী ২১ অক্টোবরে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি কোনো মন্তব্য করেছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন,প্রধান বিচারপতি মনে করেন একটা কার্যকর সমাধান হওয়া উচিত।আমরাও মনে করি একটা কার্যকর সমাধান হওয়া উচিত।’

নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,অন্তবর্তীকালীন সরকার যেমন সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে আছে। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কখন থেকে কার্যকর করবেন,সে বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়ার।আমরা বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রের পথে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই।তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে যে রায় হয়েছে,সেই রায় বাতিল করে দেশের মানুষের গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করার প্রার্থনা থাকবে।আরেকটা প্রার্থনা থাকবে যে এই রায় লেখা থেকে শুরু করে সই করা পর্যন্ত আইনি পরিক্রমায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে অপরাধ করেছেন,সে অপরাধ দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় সুনির্দিষ্ট অপরাধ।…এটিও আদালতের নোটিশে আনব।’

২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।

রিভিউ আবেদনের ওপর গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।শুনানি নিয়ে আদালত বলেন,আমরা প্রথা অনুসরণ করব।লিভ দিয়ে পুরো বিষয়টি শুনব।’পরে লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দিয়ে আদালত বলেছেন,২১ অক্টোবর আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।

আদালতে বিএনপির পক্ষে করা রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস,সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া শুনানি করেন,সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন ও কারিশমা জাহান।জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির,সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন।

এ মামলায় ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক।পরে তিনি বলেন, বিএনপির করা রিভিউ আবেদনে লিভ মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ।অর্থাৎ এখন আপিলের ওপর শুনানি হবে।২১ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলোও শুনানির জন্য আসবে।

আরও খবর

Sponsered content