সারাদেশ

চেয়ারম্যান ও মেম্বার দ্বন্দ্ব-জেলেদের পূর্নাবাসনের ত্রানের চাল পাচ্ছে না!

  প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৩৪:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি।।চেয়ারম্যান ও মেম্বার দ্বন্দ্বের কারণে ভোলার লালমোহন উপজেলার ৬নাম্বর ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে জেলে পুর্নবাসনের চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস বলেন, চাল বরাদ্ধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১০ হাজার পাঁচশ জন জেলেদের বিপরীতে মাথাপিছু ৪০ কেজি করে চাল বিতরণের জন্য বরাদ্ধপত্র দিয়েছি।এর মধ্যে সব ইউনিয়নেই চাল সরবরাহ নিয়েছে এবং বিতরণও করেছে।অথচ ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে চাল বিতরণ করছে না জনপ্রতিনিধিরা।

তিনি বলেন,ওই ইউনিয়নে বরাবরই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও চাল বিতরণ নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আসে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না।

ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুরাদ ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ইউনিয়নের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন,চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্দ্ব কাটিয়ে চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।এ জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে দুই মাসের চাল ডেলিভারি নিয়ে পরিষদের গুদামে রেখেছি।চাল বিতরণের জন্য ১৭ মার্চ পরিষদের মিটিং ডেকে জেলেদের মাঝে চালের টোকেন দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল চেয়ারম্যান।এসময় পরিষদের কয়েকজন মেম্বার ও কতিপয় ব্যক্তি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুরাদের ওপর হামলা করে তাকে আহত করে।বর্তমানে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চেয়ারম্যান সুস্থ হয়ে এলাকায় ফিরলে চাল বিতরণ করা হবে এমনটাই বলেছেন সচিব মোকাম্মেল।

ইউনিয়নের ১নাম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মোশারেফ হোসেন লাইজু, ২নাম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. নুরে আলম,৩নম্বার ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার পারভেজ,৫নম্বার ওয়ার্ড মেম্বার সালাউদ্দিন শামিম ও ৬নম্বার ওয়ার্ড মেম্বার শাকিল মোল্লাসহ অনেক মেম্বারের অভিযোগ,চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করে নিজেই টোকেন বিতরণ শুরু করে।খবর পেয়ে মেম্বাররা পরিষদে গেলে তার সঙ্গে বাক বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়।এরপর তিনি ঢাকায় চলে যায় চিকিৎসা নিতে। যার কারণে চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল বলেন,চাল বিতরণের জন্য চেয়ারমান ও মেম্বারদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছি।যাতে দ্রুত চাল বিতরণ করা হয় এবং জেলে পরিবারগুলোর ক্ষোভ দূর হয়।

ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে সুবিধার আওতায় থাকা বর্তমানে জেলের সংখ্যা রয়েছে এক হাজার ৪৯৭ জন এবং প্রতি জন জেলে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে মোট চার মাস চাল পাওয়ার কথা।

ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের তেতুঁলিয়া নদী সংলগ্ন বেড়ির মাথা এলাকার জেলে পল্লীর বাসিন্দা কবির হোসেন,মাকসুদ ও মিরাজসহ অনেকে জেলে জানান,আমাদের জেলেকার্ড ও তালিকায় নাম থাকা সত্বেও আমরা কোনো দিনই চাল পাই না। এমনকি চাল বিতরণের সময় আমরা খবরও পাই না।

ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মেম্বার ও স্থানীয়দের অভিযোগ,২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে চলেছেন।এ কারণে আদালতে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তার অপসারণ চেয়ে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে পরিষদের মেম্বাররা। এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত সাড়ে তিন বছরে তিনি কখনই জেলেদের চাল সুষ্ঠভাবে বন্টন করেনি।টাকার বিনিময়ে টোকেন বাণিজ্য করে তিনি জেলেদের চাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।এর প্রতিবাদও করেছে এলাকাবাসী। এমনকি তার বিরুদ্ধে ইউপি ভবনের সামনে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে।

সর্বশেষ গত বর্ষা মৌসুমে ২৩ দিন ইলিশ শিকার নিষিদ্ব সময়ে জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চালের বড় একটা অংশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী,জেলে ও পরিষদের মেম্বাররা প্রশাসনকে জানিয়েছে।কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুরাদ ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে অভিযুক্তের ভাই আব্দুর রাজ্জাক বলেন,মেম্বাররাই সব ধরনের অন্যায় করে চেয়ারম্যানের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই চেয়ারম্যানের ওপর হামলা করেছে মেম্বাররা।

মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস নদীতে সকল প্রকার মৎস্য আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেকার জেলেদের জন্য চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়।গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে চলতি এপ্রিল মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এ চাল বিতরণ সম্পন্ন করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content