অর্থনীতি

ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ছাড় এবং ঋণ পুনঃতফসিলের নতুন নীতিমালা করে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা

  প্রতিনিধি ৫ জুন ২০২৩ , ৬:৪৪:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা তুলে নেওয়ায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।এতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।খেলাপির এই অঙ্ক দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

রবিবার (২৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মার্চ-২০২৩ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত,২০২০ সাল থেকে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ছাড় এবং ঋণ পুনঃতফসিলের নতুন নীতিমালা করে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এখন ঋণ পরিশোধে সব ধরনের সুবিধা তুলে নেওয়ার পর খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,দেশে কার্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২ শতাংশ।অর্থাৎ ১০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৮১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে—১৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এরপরেই রয়েছে জনতা ব্যাংক।এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।তৃতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে।এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৬ কোটি টাকা।বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা, এটা সম্মিলিতভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের ব্যাংক।

পঞ্চম স্থানে আছে রূপালী ব্যাংক।এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি।ষষ্ঠ স্থানে আছে বেসিক ব্যাংক।এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি। সপ্তম স্থানে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১০১ কোটি।অষ্টম স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংকের নাম। এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৯ কোটি। নবম স্থানে থাকা পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪২৭ কোটি এবং দশম স্থানে থাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তমতে,পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ,সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে।আইএমএফের এই হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

যদিও সম্প্রতি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা সংবাদ সম্মেলন দাবি করেছেন,খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা এককভাবে ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়। এমডিদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদের, বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে,গত তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। এদিকে ঋণ আদায় না হওয়ায় বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক এখন তারল্য সংকটেও ভুগছে।এদের মধ্যে অন্যতম ন্যাশনাল ব্যাংক।গত বছরে ব্যাংকটি ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ রয়েছে এই ন্যাশনাল ব্যাংক।ফলে লোকসান ও খেলাপি ঋণে শীর্ষে উঠে এসেছে ব্যাংকটি।গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা।

মালিকানা পরিবর্তনের পর ধারাবাহিকভাবে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে।তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৪০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে। ৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা।ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও একই সময়ে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৭ কোটি টাকা।শরিয়াহভিত্তিক শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯০৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।

আরও খবর

Sponsered content