অর্থনীতি

এক মাসে ব্যাপক রপ্তানি আয় কমা অস্বাভাবিক

  প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:১৬:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ।গত অক্টোবরে এ খাতে লাগে বড় ধাক্কা।

রপ্তানি আয় কমে যায় প্রায় ১৪ শতাংশ।এক মাসে এত বেশি রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে- মালিকরা এক বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা রপ্তানি আয় বিদেশ থেকে আনেননি।

রপ্তানি আয় দেশে আনতে ট্রেড বডিগুলো যখন তাগাদা দিচ্ছে,ঠিক তার পরপরই এ ঘটনা ঘটলো।বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরাও এমনটি মনে করেন।তাদের মন্তব্য-এক মাসে ব্যাপক রপ্তানি আয় কমা অস্বাভাবিক।

তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে দেশের রপ্তানি আয়। একটি কমলে অপরটিও কমে যায়।হঠাৎ করে ব্যাপক রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় দুটি কারণকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল এ ব্যাপারে বলেন,কারণ দুটির মধ্যে একটি হলো- অক্টোবর মাস দুই মৌসুমের মাঝে ট্রানজেকশন পিরিয়ড।এ সময়ে রপ্তানি প্রতিবছরেই কমে।

অপরটি,ইউরোপ-আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমা।এটি পরের মাসেই আবার ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা যদি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি পোশাক খাতের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়।

রপ্তানিকারকরা বলছেন,মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে থেকে তৈরি পোশাক থেকে।অক্টোবর মাসেও তাই হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে ১৪ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় পুরো খাতে বড় ধরণের ধাক্কা লেগেছে।

দুই মাস আগে থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রপ্তানিকারকরা এক বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে আনেননি।বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর দেশে এনেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার।জানা গেছে,এ আয় ফেরাতে কাজ করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে আশ্বস্ত করেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

এদিকে,রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানিকারকরা এ আয় দেশে নাও আনতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অক্টোবর রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা রপ্তানিকারকরা দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ‍ড. জাহিদ হোসেন।তিনি বাংলানিউজকে বলেন,শিল্প উদ্যোক্তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে রপ্তানি আয় কমেছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

বৈশ্বিক চাহিদা তো নির্ভর করে বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর। তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ।যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।সেখানকার অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে- তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন-অ্যাম্পয়মেন্ট খুবই কম বা অন্য যাই বলি না কেন তত খারাপ না।মূল্যস্ফীতি কমেছে।সেখানে রপ্তানি কেন কম হবে, এটা কোনো ব্যাখ্যা নেই।

এখানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের কারণে আন্ডার ইনভয়েস হচ্ছে-এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন,ডলারগুলো অন্যপথে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য থেকে দাম কম দেখানো হচ্ছে কিনা দেখার বিষয় আছে।প্রকৃত দাম দেখানো মানে হলো- রপ্তানি আয় দেশে আনার বাধ্যবাধকতা থাকে।সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে গত বছর ৯ বিলিয়ন ডলার দেশে আসেনি।এক্ষেত্রে যদি রপ্তানিকারকরা কম দাম দেখায় তাহলে তা দেশে আসার প্রশ্ন আসবে না!কোনো রপ্তানিকারক যদি ৫ ডলারের পণ্য ৪ ডলার দেখায় তাহলে কেউ তাকে বলতে পারবে না কেন ওই এক ডলার আনেননি।

রপ্তানি আয়ের এত বড় পতন হলো,৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলো,বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে,ইউরোপ আমেরিকার অর্থনীতিতে তো সেরকম কোনো ধস নামেনি। আবার পোশাক শ্রমিকরা স্ট্রাইক করছে,এ জন্য রপ্তানি করা যায়নি,এমন কথাও বলা যাবে না।কারণ,গত মাসে বড় ধরণের স্ট্রাইক ঘটেনি।একসাথে শ্রমিকরা স্ট্রাইক করেছে সেটা তো চলতি মাসের দুয়েকদিন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে,জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৩৬৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য।প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলালের পণ্য।প্রবৃদ্ধি নামলো ৩ দশমিক ৫২ শতাংশে।অর্থাৎ অক্টোবর মাসে আগের বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।এক মাসে এত বেশি রপ্তানি আয় কমা খুবই অস্বাভাবিক।

আরও খবর

Sponsered content