অর্থনীতি

বেনাপোল কাস্টমসে রজস্ব কমেছে ২৪০ কোটি টাকা

  প্রতিনিধি ৩০ নভেম্বর ২০২৩ , ২:৫৫:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

বেনাপোল প্রতিনিধি।।দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক মন্দার কবলে পড়ে ডলার ও ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান অস্বাভাবিক কমায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাণিজ্য ও ভ্রমণ খাতে।বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি কমায় অর্ধেকে নেমেছে আমদানি-রফতানি; কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াতও। আমদানি কমায় গত ৪ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেনাপোল কাস্টমসে রজস্ব কমেছে ২৪০ কোটি টাকা।

বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানান,যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত হয় সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৪৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়।আর চিকিৎসা,ব্যবসা,উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে সাত থেকে আট হাজার পাসপোর্টধারী।তবে গত বছর থেকে শুরু হওয়া চলমান বৈশ্বিক মন্দা এখনও বিরাজ করায় দিন দিন ডলার ও রুপির বিপরীতে কমে আসছে বাংলাদেশি টাকার মান।

গত তিন মাস আগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বাংলাদেশি ১০০ টাকার বিপরীতে ৭৭ রুপি মিললেও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ রুপি।আর ১০০ ডলার কিনতে ১০ হাজার ৬০০ স্থলে এখন গুনতে হচ্ছে ১২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।এতে লোকসানের কারণে অনেক আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি কমিয়েছেন।খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকে যাচ্ছেন না ভারতে।

চলতি অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।গত ৪ মাসে এ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।বাণিজ্যিক মন্দায় আদায় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।এতে ঘাটতি দেখা গেছে ২৪০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে চাহিদামতো এলসি দিচ্ছে না।এতে কমেছে আমদানির পরিমাণ।

ভারতগামী বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রুবেল হোসেন জানান, বাংলাদেশি টাকার মান কমায় লোকসান হচ্ছে।জরুরি দরকার তাই সংকটে সময়েও বাধ্য হয়ে যাচ্ছি।

আমদানিকারক উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান,ডলারের সংকটে চাহিদা মতো পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।ব্যাংক নানান অজুহাত দেখিয়ে এলসি খুলতে বিমুখ করছে।স্বাভাবিক সময়ে মাসে ৮ থেকে ১০টি পণ্য চালান আমদানি করলেও এখন তিনটির বেশি সম্ভব হচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান,বৈশ্বিক মন্দার মারাত্মক বিরূপ প্রভাবেরমুখে পড়েছে বাণিজ্য।বর্তমানে আমদানির পরিমাণ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান,ব্যাংক চাহিদামতো এলসি দিতে পারছে না। কিছু এলসি দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাজের ধীরগতিতে পণ্য আমদানি করতে তিন মাস সময় লেগে যাচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানান,উচ্চ শুল্কায়নযুক্ত পণ্য মেশিনারি,গার্মেন্টস,ট্রাক চ্যাচিজ ও মোটরপার্টস আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে।এতে গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।

বেনাপোল সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার কর্মাস ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান,বর্তমান বৈশ্বিক মন্দার কারণে ডলার সংকটে আমদানিকারকদের চাহিদামতো এলসি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।তবে রফতানি বেশি করতে পারলে সেখান থেকে যে অর্থ আসবে তা থেকে আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হবে।আমদানিকারকদের রফতানি বাণিজ্যে জোর দেয়ার আহবান জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান,গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) ভারত থেকে আমদানি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ১৫৭ ট্রাক পণ্য,রফতানি পরিমাণ ছিল ৮৮ ট্রাক। আর ২২২৬ জন পাসপোর্টধারী গেছেন ভারতে এবং ভারত থেকে ফিরেছে ২৩৮৩ জন।

আরও খবর

Sponsered content