অপরাধ-আইন-আদালত

আদালতে এসেছি বিচার চাইতে-হাইকোর্টে শিশু নাঈম

  প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:২৩:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ওয়ার্কশপের কাজ করতে গিয়ে তিন বছর আগে হাত হারায় ১৩ বছর বয়সী শিশু নাঈম হাসান।এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়।রিটের শুনানিতে আজ মায়ের সঙ্গে আদালতে আসে শিশুটি।আদালত জানতে চান, ‘পড়াশোনা করো?’ শিশুটি বলে,পড়ালেখা করি।’আদালত বলেন,কোথায় এসেছ,জানো?’তখন শিশুটি বলে,কোর্টে এসেছি।’আদালত বলেন, ‘কেন এসেছ?’ শিশুটি বলে, ‘বিচার চাইতে।’তখন আদালতকক্ষে একধরনের আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।আদালত শিশুটিকে চকলেট দেন।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত রুলের ওপর শুনানি হয়।শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, তখন নাঈম হাসানের বয়স ১০ বছর।চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশা জুতা ব্যবসা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন।এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা–বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন।এই ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়েই তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়।শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি।

প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন।রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না,তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।আগের ধারাবাহিকতায় আজ রুলের ওপর শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক ও মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া,সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান।ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বারেক।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।শুনানি থাকায় শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে আজ আদালতে আসেন।

পরে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন,জেলা প্রশাসক সবার বক্তব্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।তবে মতামতে অসংগতি রয়েছে।ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য রেখেছেন।এর আগে আদালত শিশুটির বক্তব্যও শোনেন।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়,ওই ঘটনায় নাঈমের চাচা শাহ পরান বাদী হয়ে জবরদস্তিমূলক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগিয়ে আহত করার অভিযোগে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর ভৈরব থানায় মামলা করেন।মামলায় আসামি করা হয় ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হোসেন,ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি স্বপন মিয়া, জুম্মান মিয়া,সোহাগ মিয়া ও ব্যবস্থাপক রাজু মিয়াকে।এই মামলায় ২০২১ সালের ৩০ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

পত্রিকায় প্রতিবেদনে বলা হয়,নাঈমদের পরিবার যে ভবনে ভাড়া থাকত,সেই ভবনের মালিক ওই এলাকার ইয়াকুব হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি।ওই এলাকাতেই ইয়াকুব হোসেনের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। বাড়ির ভাড়াটে আনোয়ার হোসেনের পরিবারের দুরবস্থা দেখে নাঈমকে তাঁর ওয়ার্কশপের কাজে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।তিনি কথা দেন,নাঈমকে দিয়ে কোনো ভারী কাজ করাবেন না। শুধু চা আনা আর ঝাড়পোছের মতো হালকা কাজ করানোর প্রস্তাব দেওয়ায় রাজি হয়ে যান আনোয়ার-মনোয়ারা দম্পতি। প্রথম রমজানে কাজে যোগ দেয় নাঈম।

নাঈমের পরিবারের দাবি,শুরুর দুই মাস নাঈমকে দিয়ে হালকা কাজই করানো হতো।দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে থেকে নাঈমকে ড্রিল মেশিন চালানোর কাজে যোগ দিতে বলেন ইয়াকুব।রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়।পরে বাধ্য হয়ে নাঈম ড্রিল মেশিনের কাজে হাত লাগায়।২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাঈম দুর্ঘটনার শিকার হয়।এ সময় ড্রিল দিয়ে মোটা পাইপ কাটার সময় ড্রিল মেশিনে তার ডান হাতটি ঢুকে যায়।শেষে শিশুটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares