প্রতিনিধি ২ জানুয়ারি ২০২৪ , ৮:১৭:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
রবিউল ইসলাম রবি॥২ জানুয়ারী উচ্চ আদালত এর আদেশের দিকে তাকিয়ে আছেন বরিশালের ২ নেতা-নেত্রীসহ তাদের কর্মীরা।প্রার্থীতা ফিরে পেলে নির্বাচন করতে পারবে। নয়ত কপাল পুড়বে।প্রার্থীতা পেয়ে গেলে এ দু’প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি দলীয় প্রার্থীর কপাল পুড়তে পাড়ে।কারণ,দলের ভোট দু’ভাগে বিভক্ত হবে।সুযোগে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারে অন্য কোন দলের প্রার্থী।এমন টানাটান অবস্থা বিরাজ করছে বরিশাল-৪ ও ৫ আসনে। দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আ.লীগের প্রার্থী ড. শাম্মী আহম্মেদ এবং বরিশাল-৫ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল।তারা প্রার্থীতা ফিরে পেতে লিভ টু আপিল করেছিলেন।আদালতের আদেশ পক্ষে আসলে বদলে যেতে পারে এ দু’আসনের নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনী মাঠ জমজমাট করতে এ ২ নেতা-নেত্রীকে যেমন প্রয়োজন,ঠিক তেমনি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবার আশংকাও করছেন অনেকে। অনান্য বছরের ন্যায় এখন পর্যন্ত এ দুটি আসনে নির্বাচনী উত্তাপ পুরো ছড়ায়নি ।
বরিশাল-৫ আসনের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।এ রায়ের পর থেকেই বরিশাল মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনী মাঠ থেকে ঈগল মার্কা ছিটকে পড়ে।যে কারণে এ আসনে অনেকটা বিজয়ের আশার আলো দেখছেন আ. লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম।প্রচার-প্রচারণায়ও এলাকা সরগরম করে রেখেছেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনী মাঠে কার্যক্রম থমকে রয়েছে।কর্মীরা একঘরে হয়ে পড়ে। তবে নির্বাচন উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছেন সাদিকের কর্মীরা।আদালতের আদেশ পক্ষে পাওয়া মাত্রই প্রচার-প্রচারণার এ্যাকশনে নামবেন।সাদিকের ক’অনুসারী বলছেন,সিটি নির্বাচন থেকেই তাদের নৌকার পক্ষে কাজ করার সুযোগ দেয়নি প্রতিপক্ষ।সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই নেতাকর্মীরা সাদিককে বাধ্য করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে।সাদিক সমর্থক বরিশাল মহানগর আ.লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন,ইসিতে সাদিক আব্দুল্লাহ ন্যায়বিচার পাননি।এখন তিনি লিভ টু আপিল করেছেন।আমরা এখনো আশাবাদী।নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে নির্বাচনী কমিটিগুলোকে নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনাদেয়া আছে।শেষপর্যন্ত সাদিক প্রার্থীতা ফিরে পেলে পাল্টে যেতে পারে বর্তমানের নির্বাচনী মাঠের হিসেব নিকেশ। বরিশাল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের সমর্থক মহানগর আ.লীগের সহসভাপতি আফজালুল করীম বলেন, “দলে সাদিকের গ্রহণযোগ্যতা নেই,তা সিটি নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে।এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নির্বাচনেও দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি।তার যারা অনুসারী রয়েছেন তারা সিটি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিলেন।জাতীয় সংসদ নির্বাাচনেও তারা নৌকার বিপক্ষেই কাজ করবেন।এটা ধরে নিয়েই আমরা ভোটের মাঠ সাজিয়েছি।”
এমন অবস্থায় এ আসনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ট্রাক প্রতীকের মো. সালাহউদ্দিন রিপন। এছাড়া অনান্য প্রার্থীরা হলেন- এনপিপির আবদুল হান্নান সিকদার (আম),সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আসাদুজ্জামান (ছড়ি) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেন (ডাব)। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল) সংবাদ সম্মেলন করে জানা দিয়েছে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।এ সব প্রার্থীর পক্ষে এখনো জোরালো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে।অনেকেই বলছে,নির্বাচন জমাতে নির্বাচনী মাঠে সাদিকে প্রয়োজন।আর সাদিক প্রার্থীতা ফিরে পলে হাড্ডাহাড্ডির লড়াই হবে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম এর সাথে। এ লড়াইয়ে কে জিতবে তা বুঝে উঠা মুসকিল।আর সাদিক প্রার্থীতা ফিরে না পেলে তার সমর্থকরা ট্রাক প্রতীকে ভর করলে জয় হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন।কেননা বরিশালের আ.লীগ সমর্থকরা আগে থেকেই দু’ভাগে বিভক্ত।এর কারণে নির্বাচনী মাঠে এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল-৪ আসনে এক সময়ের বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত এ আসনটি নানা কৌশলে ছিনিয়ে এনেছে বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথ।টানা দুইবারের এমপি পঙ্কজ ওই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আ. লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন।কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার বিরোধের সূত্রধরে নানা অপপ্রচারের কারণে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।এ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদকে।শুরু থেকেই বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ বলে আসছিলেন,তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন না।কিন্তু শাম্মি আহমেদকে মনোনয়ন দেয়ার পর পরই পঙ্কজ অনুসারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা।উপায় না পেয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেন পঙ্কজ দেবনাথ।এরপরই ভাগ্য খুলতে শুরু করে পঙ্কজ দেবনাথের। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্বৈত্য নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ এনে
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।যার প্রমাণ পাওয়ায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ রায়ের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী ইসির কাছে আপিল করেও কোনো সুফল না পেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন।সেখানেও নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।ফলে ভাগ্য খুলতে শুরু করে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠের পাকা খেলোয়াড় বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের।
এদিকে পঙ্কজ নাথের বিকল্প না থাকায় নির্বাচনী মাঠে কোনো পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই শাম্মী অনুসারীদের।শাম্মী প্রার্থী হতে না পারায় তার কর্মীরা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।এসব নেতাকর্মীরা নির্বাচনে কারো পক্ষে কাজ করবেন নাকি নিরব ভূমিকা পালন করবেন সে নির্দেশনার অপেক্ষায় তৃণমূল নেতারা।
ড. শাম্মীর অনুসারী মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন,আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।প্রার্থিতা ফিরে পেতে ড. শাম্মী উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।সেখানে গিয়েও তিনি প্রার্থিতা পাননি।এখন পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ভাবছি।তবে তারা এখনো আশাবাদী প্রার্থীতা ফিরে পাবেন নৌকার প্রার্থী ড. শাম্মী।
বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন,সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে ভোট চাইবো।যারা আমার বিরোধিতা করেছিল,আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তাদের নিয়েই নির্বাচনে প্রচারণা চালাব।ওই আসনে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান লাঙ্গল,সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের তেমন কোনো কর্মী সমর্থক বা প্রচার-প্রচারণা দেখা যায়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা উপলক্ষে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় ড. শাম্মী আহম্মেদ এর সমর্থকরা পঙ্কজ দেবনাথ এর কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে কৃষকলীগের ১ নেতার মৃত্যুসহ আহত করেছিল প্রায় অর্ধশতাধিক।অনেকেই বলছেন,বরিশাল ৪-আসনের নির্বাচনে ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানির মত ঘটনা হবার সম্ভবনা রয়েছে।