অপরাধ-আইন-আদালত

আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না-হাইকোর্ট

  প্রতিনিধি ৩০ জুলাই ২০২৩ , ২:৩০:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।২০১৩ সালে হেফাজতকাণ্ডে শাহবাগ থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি দুই মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেছেন আদালত।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজির হওয়ার পর রবিবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর,ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মীরধা। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক।

২০১৩ সালে করা এ মামলায় আসলাম চৌধুরীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।আদালত এ মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন।ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তা আজ হাইকোর্টে হাজির হন।

এদিন শুনানির শুরুতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর আদালতকে বলেন,এ মামলায় অনেক আসামি আছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় প্রয়োজন।এ মামলার আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে।

তখন হাইকোর্ট বলেন,সে আমেরিকা গেছে নাকি ইসরায়েল গেছে,এসব আমরা দেখবো না।’

একপর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে বলেন, ‘তদন্ত শেষ করতে এত সময় নিচ্ছেন কেন?এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবেন না?’

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,এ মামলায় ১৮০ জন আসামি। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।অনেক সময় প্রয়োজন।

এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন,সিনিয়রের সঙ্গে (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) যোগ করে আমি কিছু সাবমিশন রাখতে চাই।তিনি বলেন,একই ধরনের মামলায় আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন।কিন্তু আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দিয়েছেন।

সারওয়ার হোসেন আরও বলেন,এরা (বিএনপি) তো আবার আগুনসন্ত্রাস শুরু করেছে।

তখন হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না।এসব কোর্টের বাইরের বিষয়।এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। কোর্ট তো ১৮ কোটি মানুষের।’

পরে আদালত এ মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে দুই মাস সময় দেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)।পরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।১৬ মে ৫৪ ধারায় (মোসাদ কানেকশনে সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ) গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে আনার আবেদন জানানো হয়। আদালত সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়।দণ্ডবিধির ১২০ (বি), ১২১ (৩) ও ১২৪ (এ) ধারায় ডিবির পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রের সন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বলা হয়,আসলাম চৌধুরী ওই বছরের ৫ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কবহিভূত রাষ্ট্র ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।যার কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আসামিরা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের জন্য দেশে সন্ত্রাস,নাশকতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করে, যা দেশের অখণ্ডতা,স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।

ভারতে গিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের’ জন্য আলোচনা করার অভিযোগ রয়েছে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।দিল্লি ও আগ্রার তাজমহল এলাকায় ইসরায়েলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের বেশ কিছু ছবি প্রকাশিত হয়।

পরে ওই মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত,২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন আসলাম চৌধুরী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন।এর আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।পরে তিনি দলটির যুগ্ম মহাসচিব হন।

আরও খবর

Sponsered content