সম্পাদকীয়

সাংবাদিক হত্যা বনাম সাংবাদিক সুরক্ষা আইন!!

  প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২২ , ৫:১৫:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম@:-সারা দেশে যখন একের পর এক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটছে তখন সাংবাদিকেরাও বাদ যাচ্ছেন না।

স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে যদি একের পর এক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে কিংবা সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন তাহলে এর চেয়ে হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?

সর্বশেষ দৈনিক আমাদের নতুন সময় এর কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ও সাহসী সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৫ দিন আগে তাকে মোবাইলে ফোনে ডেকে নেয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

স্থানীয় একটি খালে তার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ শঙ্কিত না হয়ে পারেনা। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা যারই পৃষ্ঠপোষকতা পাক না কেন তাদের কোন ছাড় দেয়া সরকারের সমচিন হবে না।

প্রশ্ন হলো সাংবাদিকদের উপর কেন একর পর এক হামলা ঘটনা ঘটছে? কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে অব্যাহত সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। ।

দেশে সাংবাদিক হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিনের পর দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগতই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথাগত দুঃখপ্রকাশ ও হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকদের পেশায় এ চলমান ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্র কি কোনো উদ্যোগ নেবে? সাংবাদিক সমাজের জন্য অদূর ভবিষ্যতে কি কোনো উজ্জ্বল আলো অপেক্ষা করছে? বিশ্বের যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাংবাদিক খুন হয় আর তার বিচার হবে না তা কী করে হয়? পরিসংখ্যানটি আঁতকে ওঠার মতো।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের একটি ঘটনার সঠিক বিচার হয়নি। খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। প্রতি বছরই একাধিক সাংবাদিকের অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু সারা জীবন সত্যের পেছনে ছুটে বেড়ানো এসব সাংবাদিকের হত্যা রহস্য হিমশীতল বরফের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। শুধু বিচারই নয়, একটি হত্যাকান্ডেরও রহস্য প্রকাশিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাপন করছে স্বাভাবিক জীবন। কেউ কেউ রয়েছে জামিনে।

কেউ আবার মিডিয়াতেই কর্মময় জীবনযাপন করছে। অনেক হত্যাকান্ডের বিচারকার্য এমনকি তদন্তকাজ, চার্জশীট ঝুলে আছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এ দীর্ঘ সময়ে সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায় কোন সরকারই এড়াতে পারবে না।

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরে থাক, কোন সাংবাদিক হত্যাকান্ডেরাি বিচার হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে হরদম। সরকারকে এসব হত্যাকান্ডের বিচারে অবশ্যই আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে।

কোন একটি মামলার বিচারকার্য আজ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। ফলে তারা সাংবাদিকদের বাসগৃহে প্রবেশ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার মতো স্পর্ধা দেখাতেও পিছপা হচ্ছে না। আমরা চাই, দেশে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক। এটি একটি দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। এখন আর মুখের কথায় কেউ আস্থা স্থাপন করতে চায় না। সাংবাদিক নির্যাতন অার হত্যাকান্ড নিয়ে কোন টালবাহানা দেশের জনগণ ও সাংবাদিক মহল মেনে নেবে না। তাই সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ও বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়ে অতি সত্বর মূল অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করবে এটাই আমরা বিশ্বাস করি।

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সংবাদপত্র, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা বিষয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। সাংবাদিক মানেই ধান্দাবাজ, প্রতারক, ব্লাকমেইলার ও ভীতিকর কোনো প্রাণী, এমন ধারণাই পোষণ করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। প্রকৃত সাংবাদিকরা এর কোনটাই নন। সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। এটা কেবল পেশা নয়, একজন সাংবাদিক এ সেবায় থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারেন।

দেশের কতিপয় অসৎ সম্পাদক, সাংবাদিক অর্থের বিনিময়ে সারাদেশে নানা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র দিয়ে এ পেশার সম্মান হানি করছে। এরা সাংবাদিক নন। সাংবাদিক নামধারী। এদের কতকের কারণে সাংবাদিকতা যে একটি অনন্য পেশা তা দেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না। এখনও সংবাদপত্র জনগনের কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বলেই দেশের মানুষ অনেকটা শান্তিতে আছেন। সৎ সাংবাদিকতার জায়গাটা বিলুপ্ত হলে দেশে দুর্ভোগ নেমে আসবে।

একটি সংবাদপত্র আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সারা দেশের হাজার হাজার সাংবাদিকের ঘাম শ্রম ও জীবনঝুঁকি জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমহীন কাজ করতে হয় অনেক সংবাদকর্মীর। অনেকটা নিশাচরের ভূমিকা তাদের। সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন বলতে কিছু নেই। কিন্তু কিছু অসৎ এবং ভুয়া সাংবাদিকদেও কারণে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজে নেই বললেই চলে। পাশাপাশি নিরাপত্তাঝুঁকি তো রয়েছেই। সমাজের অনেক সাংবাদিক ত্যাগী, নির্লোভী ও সৎ। তারা মানবকল্যাণে, সমাজকল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন।

এই দিকটিও সরকারকে আমলে নিতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যা বন্ধ করা না গেলে সৎ, মেধাবী, যোগ্য, তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন যে সংবাদপত্রে ঢুকছেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এমনিতেই সাংবাদিকদের পেশাগত নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা নেই, তার ওপর যদি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তাদের জীবনঝুঁকি বেড়ে যায় কিংবা তারা হামলা-হত্যার শিকার হন তাহলে কিভাবে সাংবাদিকতা পেশা বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে।আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

আরও খবর

Sponsered content