প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৪:৩৮:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।।মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও বর্ডার পাস বন্ধের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সায় নেই মিজোরামের বাসিন্দাদের।উত্তরপূর্বের এই রাজ্যে পা রাখলেই বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষিত এই দুই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিজোরাম কতটা আলোড়িত।
মিজোরামের মধ্যে ইয়ং মিজোরাম অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমএ এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন।তার সভাপতি লালমাছুয়ানা জানিয়েছেন, ‘নাগাল্যান্ড এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। মিজোরামের এমপিরা এর বিরোধিতা করেছেন,মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধিতা করেছেন।নাগাল্যান্ডের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছি।ভারত সরকারকে কোনোভাবেই এই কাজ করতে দেওয়া হবে না।’
এর একটা ঐতিহাসিক কারণও আছে।এই এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে গেলে সেই ইতিহাসটাও জানা জরুরি।
ভারত-বংলাদেশ ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে এই ধরনের বেড়া লাগানো হয়নি।বরং এই সীমান্ত সাধারণ মানুষের জন্য খোলা। বর্ডার পাস থাকলে মিয়ানমার সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার ও ভারতীয় সীমান্তের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকতে পারেন দুই দেশের কুকি,জো,চিন জনজাতির মানুষ।
এর অবশ্য একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে।এখানকার মানুষের বক্তব্য,জো,কুকি ও চিন একই জনজাতির মানুষ। ব্রিটিশ আমলে তারা একসঙ্গে বসবাস করতেন।দেশভাগের পর একটা দল সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে থেকে যায়,একটা দল ভারতে বসবাস করে এবং একটা দল মিয়ানমারে থাকে।এদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক আছে, বাণিজ্য সম্পর্ক আছে ও নিয়মিত যাতায়াত আছে।
কিন্তু মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও মেইতিরা দাবি জানিয়েছে,মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে প্রচুর সশস্ত্র মানুষ মণিপুর ঢুকছে এবং তারা মেইতিদের আক্রমণ করছে।তারপর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও বর্ডার পাস বন্ধ করার কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
মিজোরামের সীমান্ত এলাকা চম্পাইয়ের ব্লক রিসোর্স সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর লালরিনমুয়ানা বলেছেন, ‘আমরা (কুকি, জো, চিন) সবাই ভাই।বুঝতে হবে,এটা আমাদের গ্রেটার ল্যান্ড। আমরা এখানে বেড়া বসাতে দেব না।এত অভিবাসী এখানে আছেন তাদের তাহলে কী হবে?’
তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘মণিপুর চাইলে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগাক। আমাদের আপত্তি নেই।কিন্তু আমরা এখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগাতে বা বর্ডার পাস বন্ধ করতে দেব না।’
সরকার তাদের আপত্তি আগ্রাহ্য করে সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করলে কী করবেন? লালরিনমুয়ানার বক্তব্য, ‘এখন সেব্যাপারে কিছু বলব না। সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিলে তখন দেখা যাবে।’
মিজোরাম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ।সেখানে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই সংগঠন হলো পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএ) ও চিন ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ)।তারা আবার চিন ন্যাশনাল ফোর্সের অধীনে।এই ফোর্সের সদস্যরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা। এখন বিদ্রোহী।তারাই বিদ্রোহী দুই সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।তারাই পুরো এলাকার দখল নিয়ে রেখেছে। সীমান্তে এখন চিন ডিফেন্স ফোর্সের আউটপোস্ট রয়েছে। মিয়ানমারের কোনো সেনা এখানে নেই। তারাও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বিরোধী।