অপরাধ-আইন-আদালত

বহুরূপী প্রেমিকা খুন- দুই প্রেমিককে গ্রেফতার

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১:৪৬:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।তিন প্রেমিক পরিকল্পিতভাবে রংপুরের কাউনিয়ায় দশম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা খানম ইভাকে প্রাণে শেষ করে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক প্রেমিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার আগে সানজিদাকে সর্বনাশ করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য মেডিক্যালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার আঠার ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার মোটিভ উদ্ধারের দাবিও করেছে পুলিশ। তবে পরিবার ও স্কুলশিক্ষকদের দাবি সানজিদা ভদ্র এবং মেধাবি ছাত্রী ছিল। বখাটেদের প্রস্তাবে সারা না দেয়াতেই হয়েছে এই ঘটনা।

রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বেলা আড়াইটায় কোচিং করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকের সাথে বেড়াতে যাওয়ার পর কুটিরপাড়ায় রাস্তায় রাত সাড়ে ৯টায় পড়ে ছিল স্কুলশিক্ষার্থী সানজিদা খানম ইভার রক্তাক্ত শরীর। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সানজিদার কথিত প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম সায়েমকে আমরা গ্রেফতার করি ওই রাতেই।

বুধবার রাতে সায়েম আদালতে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এছাড়াও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সায়েম অনেক তথ্য জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেছেন, একাধিক প্রেমের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে কথিত প্রেমিকরা তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। বিষয়টি ডিজিটাল ডিভাইস চেক, আদালতে দেয়া একজনের জবানবন্দি এবং আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, খুবই স্পর্শকাতর তথ্য আমরা পেয়েছি, যা আমাদের পরিবার এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে কোনোভাবেই যায় না।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় ভিকটিম বাড়ি থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হলেও বাড়ির ৫০ গজ দূরে বড়দরগার দিকে না গিয়ে নব্দীগঞ্জের দিকে যায়। কিছু দূর গিয়ে তার প্রেমিক পাশের গ্রামের তালুকপশুয়ার নুর হোসেনের ছেলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম সায়েমের মোটরসাইকেলযোগে রংপুর মহানগরীতে যায়।

সেখানে শাপলা সিনেমা হলে সিনেমা দেখে। সায়েমের সাথে তার তিন বছরের সম্পর্ক থাকলেও মাস তিনেক আগে ব্রেকআপ হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং দেখাশুনাসহ সব কিছুই চলতে। সিনেমা দেখার ফাঁকে সায়েমের সাথে সানজিদার অন্য প্রেমিকদের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সানজিদা সায়েমের মোবাইল ফোনে তার ফেসবুক আইডি লগইন করে। এ সময় সায়েম দেখতে পায় একাধিক ছেলের সাথে সানজিদার আপত্তিকর চ্যাটিং। তখন সায়েম সানজিদাকে আরেকজন মেয়ের ছবি ও চ্যাটিং দেখিয়ে বলে, মেয়েটি সায়েমকে পছন্দ করে। তার সাথে এখন প্রেম চলছে। এসব বিষয় নিয়ে সিনেমা হলেই তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। হল থেকে বাইরে বের হয়ে সানজিদা একাই চলে যায় মাহিগঞ্জে।

পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল আরো জানান, হলের সামনে থেকে রাগ করে ভিকটিম (সানজিদা) চলে যাওয়ার পর সায়েম সানজিদার আরেক প্রেমিককে মোবাইল করে ঘটনা খুলে বলে। তখন ওই প্রেমিক আরেক প্রেমিকসহ মাহিগঞ্জ আসে এবং তাজহাট কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-সংলগ্ন একটি গলির রাস্তায় সানজিদাকে নিয়ে যায়। একটু পর সেখানে যায় সায়েম। চারজন মিলে সেখানে সিনেমা হলের ঘটনাটি মীমাংসা করে। পরে সেখানে চারজনেই পীরগাছার আলীবাবা থিম পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সানজিদা অন্য একজন কথিত প্রেমিকের মোটরসাইকেলে ওঠে। আর কথিত আরেকজন প্রেমিক ওঠে সায়েমের মোটরসাইকেলে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, আলী বাবা থিম পার্কের সামনে পৌঁছানোর পর রাত হওয়ায় সেখানে ভেতরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সানজিদা। বলে বাড়িতে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। তখন তারা চারজনেই ওই দুটি মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। এর মাঝে একটি ফাঁকা জায়গায় কথা বলার জন্য দাঁড়ালে সেখানে অনেক পথচারী থাকায় আবারো বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে টেপামধুপুর-নব্দীগঞ্জ সড়কের হরিচরণ লস্কর এলাকায় একটি ফাঁকা জায়গায় দুটি মোটরসাইকেল দাঁড় করায়।

এক পর্যায়ে তারা তিনজন বলে এখন যদি তোকে রেপ করি তাহলে কী হবে? তখন সানজিদা তাদেরকে বলে, তোদেরকে আমি বিশ্বাস করি না। এরপর তারা সানজিদাকে তাদেরসহ অন্যদের সাথে সাথে চ্যাটিং করা, প্রেম করা এবং শারীরিক সম্পর্ক করার বিষয়ে জানতে চায়। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে প্রথমে সায়েম চাকু বের করে স্টেপ করার চেষ্টা চালায়। তখন হাত দিয়ে বাধা দিতে গেলে উভয়ের হাতের আঙ্গুল কেটে যায়। এক পর্যায়ে সায়েম সানজিদার গলায় স্টেপ করে। আরো স্টেপ করতে গেলে চাকু ভেঙে যায়।

আরও খবর

Sponsered content