অপরাধ-আইন-আদালত

পাঁচলাইশ থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

  প্রতিনিধি ৭ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:৩৬:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।থানায় আসেন না চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার ও একই থানার এসআই আবদুল আজিজ।মায়ের ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন থেকে গ্রেফতারের পর পাঁচলাইশ থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক যুবক। এর পর থেকেই তারা থানায় অনুপস্থিত।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্তকারী সংস্থাকে (সিআইডি) তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।চট্টগ্রাম সিআইডির চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ মামলাটি তদন্ত করছেন।

গত ৭ মার্চ সিআইডির আদালতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়,অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলার এক নম্বর আসামি পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন কর্মস্থলে আসেননি।এ ছাড়া এসআই আবদুল আজিজ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কর্মস্থলে গরহাজির আছেন।

বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ওসির দায়িত্ব পালন করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, ‘ওসি স্যার ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নিয়েছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি এখন পর্যন্ত ছুটিতে আছেন।থানার এসআই আবদুল আজিজও ছুটিতে গিয়ে গরহাজির আছেন। ছুটি শেষে কবে থানায় ফিরবেন তা আমি বলতে পারব না।’

এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন,পাঁচলাইশ থানার ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলা আদালতের নির্দেশে আমি নিজেই তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ মামলা তদন্ত করা হবে।’

নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোখলেছুর রহমান বলেন,পাঁচলাইশ থানার ওসি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন।তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি পিটিশন হয়েছে।পিটিশনের অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে সিআইডিকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন আদালত।প্রতিবেদনে ওসি অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার বাদী মোস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমি কিডনি রোগী।আমার দুটি কিডনি নষ্ট।প্রতি সপ্তাহে দুই বার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়।চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ডায়ালাইসিস ফি হঠাৎ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়।আমার মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে এতো টাকা ডায়ালাইসিস ফি দেওয়া সম্ভব ছিল না।ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন থেকে আমার ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে অনেক মেরেছে।মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।আমার একমাত্র ছেলে।সে চোর,ডাকাত নয়,সে ছাত্র।তাকে বিনা কারণে পুলিশ হাজতে মেরেছে।আমি জড়িত পুলিশের বিচার চাই।’

মোস্তাকিম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদ অক্সিজেন এলাকার মৃত খালেদ আজমের ছেলে।চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল শেষ বর্ষে পড়ার পাশাপাশি সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে ইসলামের ইতিহাসে অনার্সে পড়ছেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছার আদালতে ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

মোস্তাকিম বলেন,হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসিসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। মামলা তদন্তের জন্য সিআইডিকে আদালত দায়িত্ব দিয়েছেন। এতো কিছুর পরও এখন পর্যন্ত ওসির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।ওসি মামলাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আমার মনে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশীদ জানান, ‘ফৌজদারি মামলায় কোনও সরকারি কর্মকর্তা আসামি হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। তাদের এ মামলায় জামিন নিতে হবে।তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তারা চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন।যদি চার্জশিটভুক্ত হন তাহলে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারে যদি নির্দোষ প্রমাণ হন সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা চাকরি ফিরে পাবেন।’

পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলায় বাদী মোস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন।সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন,মোস্তাকিম গরিব ঘরের সন্তান। টিউশনির আয় দিয়ে বৃদ্ধা মা ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোনের খরচ জোগান। কিডনি রোগী মায়ের ডায়ালাইসিস ফি কমানোর জন্য আন্দোলন করেছিলেন।পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে।এটা অমানবিক।এখানে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।থানায় নির্যাতনের অভিযোগে মোস্তাকিম আদালতে পাঁচলাইশ থানার ওসি এবং এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।এছাড়া ওসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতর,আইজিপি,সিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন দফতর থেকে তদন্ত হচ্ছে।এত কিছুর পরও তিনি ওসি পদে বহাল রয়েছেন। বিষয়টি উদ্বেগের।’

গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন থেকে গ্রেফতার করা হয় মোস্তাকিমকে।পরে পুলিশের উপর হামলা ও দায়িত্বে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান মামলা করেন।ওই মামলায় মোস্তাকিমকে গ্রেফতার দেখিয়ে পর দিন ১১ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়।এ মামলায় আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মোস্তাকিম। ১৬ জানুয়ারি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তার বর্ণনা দেন তিনি। দেখান শরীরে পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন।

আরও খবর

Sponsered content