প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:২৬:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল প্রতিনিধি।।প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা।তবে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপনকেই প্রচারের মাঠে সরব ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। বাকি প্রার্থীদের যেমন পোস্টারও দেখা যায় না,তেমনই নেই কোনো মাইকিংও।তাদের কোনো রকম গণসংযোগে দেখা যাচ্ছে না।
বরিশাল সদর-৫ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৮ জন তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছিলেন।এর মধ্যে ৮ জনের প্রার্থিতাই বৈধ বলে ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বরিশালের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বৈধতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়।এতে এখন পর্যন্ত ৭ প্রার্থী টিকে রয়েছেন।তবে কখনো প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে, কখনো হারিয়ে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাওয়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।বলতে গেলে, বরিশাল-৫ আসনে সাদিকই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষের আপিলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র দুবার প্রার্থিতা হারিয়েছেন।সর্বশেষ উচ্চ আদালতের আদেশে ঈগল প্রতীক পেলেও,আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশের কারণে তিনি এই সংসদ নির্বাচনে আর প্রার্থী থাকতে পারেননি।তবে এতেও যেন হার মানতে নারাজ সাদিক আবদুল্লাহ ও তার অনুসারীরা।
সাদিকের অনুসারীরা বলছেন,নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পেতে নিয়মানুযায়ী যা যা প্রয়োজন তাই করবেন তারা।নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে মাঠের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। আর প্রার্থিতা ফিরে না পেলে সাদিকের সমর্থনও যে কোনো প্রার্থীর ভাগ্য পরিবর্তনের নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে।যদিও সাদিকের চাচা বিপুল ভোটে বিজয়ী বর্তমান সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও তার অনুসারীরা দলের প্রার্থী জাহিদ ফারুককেই পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।সেই হিসেবে নগরের ভোটে নৌকার প্রার্থী ভাগ্য প্রসারিত করেই মাঠে নেমেছেন।সব মিলিয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বলছেন,উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নৌকা প্রতীকেই আস্থা বরিশালবাসীর,সেক্ষেত্রে নৌকার বিজয় নিশ্চিত।আর যারা দল করেন এবং আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তারা নৌকার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা করতে পারেন না।যদিও এখন পর্যন্ত প্রচারের মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাদিক অনুসারীদের কাউকেই দেখা যায়নি,এমনকি হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা কোনো নেতাকেও দেখা যায় না প্রচারে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানতে চাইলে,তারা বরাবরই বলে আসছেন,নৌকা প্রতীক দলের হলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক করতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন,তাই তারা সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন।আর এ জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের পাশে রয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের দপ্তর সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন,প্রধানমন্ত্রী এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন।তাকে বিজয়ী করতে সবাই কাজ করছেন এবং করবেন।এখন কেউ যদি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করব। অন্যদিকে দুদিনের প্রচারে মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার সঙ্গে যারা রয়েছেন,তারা সবাই সদর আসনের বর্তমান সংসদ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকার প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠজন।সে সঙ্গে সাদিকের চাচা ও বর্তমান সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অনুসারীরাও রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে। অন্যদিকে প্রচারমাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপন।নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত এই প্রার্থী দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিজয়ী হবেন তিনি।
যদিও অনেকেই বলছেন,সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত না থাকতে পারলে তার সমর্থনটা এই প্রার্থীর ওপরই ভর করবে।তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কোনো প্রার্থী।১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে,বরিশাল সদর আসন থেকে ১৯৯১ ও ২০১৪ সালের উপনির্বাচন ছাড়া বিএনপি ৭ বার এবং আওয়ামী লীগ ৩ বার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়ী হয়েছে।সেই হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনে না এলেও সমর্থকদের ভোট একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
ভোট বর্জন করেছেন জাপার প্রার্থী :
এদিকে বরিশাল সদর ৫ ও ২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ভোট বর্জন করেছেন।তিনি রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে সংবাদ সম্মেলন করিনি।আমি ভোটের মাঠে নেই, কারণ আমি ভোট বর্জন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন একটি পাতানো নির্বাচন।যে নির্বাচনে ১৪ দলকে ৭টি সিট,জাতীয় পার্টিকে ২৬টি সিট ছেড়ে দেওয়া হয়,সেখানে রেজাল্ট তো নির্ধারণ হয়েই গেছে।সেখানে নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই।’ এর আগে,মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও প্রতীক বরাদ্দের সময় তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাননি। তা ছাড়া তার কোনো পোস্টার কিংবা গণসংযোগ করা হয়নি।জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকরাও এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।