রাজনীতি

নয়া পল্টন ও গুলিস্তান এলাকা লোকারণ্য হলেও রাজধানীর অন্য এলাকাগুলো অনেকটাই ফাঁকা

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২৩ , ২:৫৬:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ক্ষমতাসীন দলের তিনটি সহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়া পল্টন ও গুলিস্তান এলাকা লোকারণ্য হলেও রাজধানীর অন্য এলাকাগুলো অনেকটাই ফাঁকা।

দুপুরের দিকে এক পশলা বৃষ্টিতে এসব সমাবেশে জনসমাগম কম হতে পারে,অনেকের এমন ধারণা ছিল।কিন্তু বিভিন্ন সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।তবে শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় গণপরিবহন কম চললেও খুব একটা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি রাজধানীবাসীকে।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সামনে বসেছে বিএনপির সভামঞ্চ।বেলা ২টার পর শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন।নয়াপল্টন সড়কের পাশাপাশি মতিঝিল,শান্তিনগর,বিজয়নগর এলাকায়ও সমাবেশের প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের আয়োজনে ঢাকা বিভাগীয় শান্তি সমাবেশের সভামঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিকাল ৩টার পর শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম।

বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন গুলিস্তান,জাতীয় প্রেস ক্লাব,কদম ফোয়ারা,পল্টন,হাইকোর্ট মোড়,শাহবাগ মোড়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি,শহীদ মিনারেও আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এদিন কার‌্যত সকাল থেকেই রাজধানীর একটি অংশ জুড়ে ছিল সমাবেশের আবহ। বিএনপি ছাড়াও সরকারবিরোধী আরো কয়েকটি সংগঠন এদিন সমাবেশ করেছে।

এর মধ্যে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং এবি পার্টি সকাল সাড়ে ১১টায় বিজয়নগর সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।

এছাড়া, বিকাল ৩টায় গণতন্ত্র মঞ্চ পুরানা পল্টন মোড়ে, ১২ দলীয় জোট ফকিরাপুল পানি ট্যাংকের কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগরে আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথে,গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে,গণঅধিকার পরিষদ (নুর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে,বাংলাদেশ লেবার পার্টি বিজয় নগরে,এনডিএম মালিবাগ মোড়ের হোসাফ টাওয়ারের সামনে এবং সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ শাহবাগের মোড়ে সমাবেশ করে।

বৃষ্টির কারণে অবশ্য কয়েকটি সংগঠনের সমাবেশ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।

দুপুরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পল্টন থেকে মহাখালী যান তপু। তিনি জানান,মতিঝিল,পল্টন এলাকা,বিজয়নগর, কাকরাইল মোড়, মগবাজার এলাকায় জনসমাগম বেশ।ছোট ছোট দলে হেঁটে নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন গন্তব্যে।বৃষ্টির কারণে অনেকেই জটলা করে অপেক্ষা করেছেন,বৃষ্টি থামলে ফের যাচ্ছে সমাবেশের দিকে।

তবে কাকরাইল থেকে মহাখালী আসার পথে কোনো বেগ পেতে হয়নি তার,অনেকটাই ফাঁকা ছিল রাস্তা।

দুপুরে মিরপুর থেকে মহাখালী আসার মোটর সাইকেলে করে পুরো পথে মাত্র কয়েকটি গণপরিবহন দেখেছেন শামীম শুভ।

তিনি বলেন,রাস্তাঘাটে লোকজনও তেমন চোখে পড়েনি। বাসও কম।”

বেলা আড়াইটায় ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে বাসের সংখ্যা কম থাকায় অনেককে হেঁটেই গুলিস্তানে আসতে দেখা গেছে।

ওই এলাকায় শিশু সন্তান নিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে এক নারী মিরপুরগামী বাস পেয়েছেন।তিনি একটি বাসে ভিড়ের জন্য উঠতে পারেননি।পরের বাসটিতে একরকম জোর করেই উঠেন।

এ সময় বাসটির চালকের সহকারী বলেন,মহিলা মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা নেই।আবার শিশু বাচ্চাও সঙ্গে; তাই নিতে চাইনি। অন্য এলাকা পুরো ফাঁকা,এখানে যত ভিড়।”

রাস্তায় বাস কম থাকায় সুযোগবুঝে অটোরিকশার চালকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় এক নারী বলেন,ছুটির দিন হলেও সড়কে গণপরিবহন তেমন নেই।মোবাইল নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসও প্রায় বন্ধ পাওয়া গেছে সকালে।সিএনজি চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছেন।সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত যেতে অটোরকিশায় ভাড়া চেয়েছে আড়াইশ’ টাকা।”

ভাড়া বেশি চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অটোরিকশার চালকের শাহিন বলেন, “রাস্তায় জ্যাম নাই,কিন্তু দুই দলের মিছিল তো আছে।ভাড়া কম হইব না।”

দুপুরের পর মিরপুর,ফার্মগেইট,বাংলামোটর,শাহবাগ,জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের আনাগোনা।তবে বৃষ্টির বাগড়ায় পড়তে হয়েছে অনেককে।গণপরিবহন থাকলেও নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশের দিকে ছুটতে দেখা গেছে আনক বাসকে।

সমাবেশের পরও থাকবে পুলিশের নজরদারি;-

এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সকাল থেকেই নজরে এসেছে।বিশেষ করে রাজধানীর প্রবেশ মুখ ছাড়াও শাহবাগ,মগবাজার,মহাখালী, যাত্রাবাড়ি,মতিঝিল এলাকায় বেশ তৎপর দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন,সমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরণের নাশকতা এড়াতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।সমাবেশ ফেরত লোকজনের ওপরও নজরদারি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন জানান,পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব,বিজিবি,আনসার সদস্যরা রয়েছেন,যারা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সম্ভব্য নাশকতা রোধে কাজ করছেন।

“আমরা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরায় মনিটর ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করেছি।”

তিনি বলেন,সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে যেন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা যেন নিরাপদে ফিরে যেতে পারে,সে পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় থাকবে। যারা সমাবেশ শেষে ফিরে যাবেন তাদেরও আমরা মনিটর করব।”

সমাবেশের সময় দুপুরে দিকে হলেও ভোর থেকেই পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান।

ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন,সার্বক্ষণিক তার এলাকা নজদারির মধ্যে আছে।যেকোনো ধরণের সংহিংসতা বা নাশকতা যেন না হয় সে ব্যাপারে তারা দেখভাল করছেন।

মতিঝিল বিভাগের (গোয়েন্দা) উপ কমিশণার রাজিব আল মাসুদ দুপুরে জানান,তারা মাঠে আছেন।কোনো সমস্যা নেই।

“আমরা সতর্কতার সাথে কাজ করছি।সাধারণ জনগণের নিরপত্তার বিষয়টিকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।”

আরও খবর

Sponsered content