প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৪ , ৫:২৩:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।দেশে কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে,এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। কিডনি রোগ প্রতিরোধের বার্তা মানুষ ঠিকভাবে পায় না।তবে সরকার গ্রামপর্যায়ে রোগ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন।
‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য-কিডনি চিকিৎসায় সহ–অধিকার: অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)’।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন,কিডনি রোগীদের জন্য পৃথক বিমাব্যবস্থা চালু হলে অনেক রোগী চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।তিনি বলেন,সুস্থ জীবনধারার চর্চা ও কিডনি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা,পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান এড়ানো ও পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।কিডনি ভালো রাখতে হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
জাতীয় অধ্যাপক ও ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন,কিডনি রোগ,ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে,প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে; কিন্তু মানুষ তা শুনছে না।কারণ,ঠিকভাবে মানুষের কাছে তা বলা হচ্ছে না।কীভাবে বললে মানুষ শুনবে,গ্রহণ করবে,তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন এই ডায়াবেটিসবিশেষজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন,কিডনি রোগ হয়ে গেলে সমস্যা, সুতরাং এই রোগ যেন না হয়,সে বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে।’ তিনি বলেন,অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ,অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি রোগের কারণ।
বছর দুই আগের একটি গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য উদ্ধৃত করে সরকারের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন,কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে,দেশে এমন মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল।
দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগছেন,এমন এক নারী ও তাঁর ছেলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।তিনি বলেন,২০০০ সালে তাঁর কিডনি রোগ ধরা পড়ে।এরপর তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন।প্রতিস্থাপনের পর কয়েক বছর ভালো ছিলেন। এর মধ্যে তিনি বিয়ে করেন,এক ছেলের জন্ম হয়।পরে আবার কিডনি খারাপ হয়। এখন তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। তাঁর স্বামী বিদেশে থাকেন।
ওই নারী আরও বলেন,চিকিৎসা খরচ জোগাতে গিয়ে তাঁরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন।সরকার যেন তাঁদের মতো রোগীদের জন্য বিমাব্যবস্থা চালু করে,সেই অনুরোধ করেন তিনি।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ বলেন,৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।কারণ,শুরুর দিকে কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়।তিনি বলেন, চিকিৎসকদের গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিশু কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন,দেশে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সময়ের আগে।সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি।ঝুঁকি এড়াতে এদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারিসুল হক।অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন এবং বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক নিজামউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য দেন।