স্বাস্হ্য ও জীবন পরিচর্যা

গর্ভে সন্তান মারা যায় কেন ? সন্তান কেন বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায় ?

  প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১:৪৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সনিয়া ইসলাম।সন্তান প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়, আর অনেক মা কেনই বা এই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় ??কখনও কি এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন ?? না জেনে থাকলে আসুন জেনে নেই কারণগুলো । আর কিভাবে এসব রোধ করা সম্ভব সেই সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করি ।

বেশিরভাগ সময়ে গর্ভবতী মায়েরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করে থাকে গর্ভাবস্থার ৮-৯ মাসের সময় ।এত দেরিতে কেন আসলেন ডাক্তার এমন প্রশ্ন করলে উত্তর আসে,”কি বাবু সেটা তো এখনই ভালো বুঝা যাবে।বাবু ছেলে নাকি মেয়ে এটা জানতেই এতদিন অপেক্ষা “।

নিয়মিত ফলোআপে আসা রোগীকে যদি ৩ মাসের সময় বলা হয়, একটা আল্ট্রাসনো করে ফেলেন।উত্তর আসবে, “এখন না ম্যাডাম ৭/৮ মাসের সময় করাবো ।”

ব্যপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আল্ট্রাসনোগ্রামের একমাত্র লক্ষ্য গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এই বিষয়টি জানা।

কিন্তু সত্যিই কি তাই ? এত কষ্ট করে, এত টাকা ও মেধা ব্যয় করে, এত বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন তৈরি করাটা কি শুধুই গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এটি জানার জন্য ?ডাক্তারগণ যে কয়েকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করায় সেটার কি সত্যিই কোন দরকার আছে ? নাকি সবটাই টাকা খাওয়ার ধান্দা ??

গর্ভকালীন সময়ে কখন, কতবার এবং কেন আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে আর আল্ট্রাসনোগ্রাম করার উদ্দেশ্য কি ??

গর্ভাবস্থায় অন্তত ৩ বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত। ১ম আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে ২-৩ মাসের মধ্যে।তবে ২য় মাসে করানোটাই সবচেয়ে উত্তম । এসময় আমরা জানতে পারবো-~ রোগী আসলেই গর্ভবতী কিনা এই বিষয়ে জানা যায় ।

অনেক সময় দেখা যায় প্রস্রাব টেস্টে পজিটিভ দেখালেও ব্লাড টেস্টের বা অন্যান্য টেস্টের রিপোর্টে গর্ভে কোন সন্তান নেই । এর কারণ হচ্ছে অনেক সময়ই শুধুমাত্র সন্তানের থলি আসে, কিন্তু থলিতে সেখানে সন্তান থাকেনা।~ সন্তান জরায়ুতে আছে নাকি অন্য কোথাও এই বিষয়টি সম্পর্কে এই আল্ট্রাসনোগ্রাম থেকে জানা যায়।সন্তান জরায়ুতে না থেকে অন্য কোথাও থাকাকে বলে এক্টপিক প্রেগন্যান্সি।এ ক্ষেত্রেও প্রস্রাব টেস্ট পজিটিভ আসে।

কিন্তু সন্তান বেশিদিন বাঁচে না । পেটের ভেতরেই সন্তান মারা যায় ।

গর্ভে সন্তান একজন নাকি একের অধিক এই বিষয়ে জানা যায় এই সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে।অনেকে মাস বা তারিখ মনে রাখতে পারে না।এসময়ের আল্ট্রাসনোগ্রামে সন্তানের বয়স কত সেটা জানা যায়।মায়ের জরায়ুতে কোন সমস্যা আছে কি না।সমস্যা থাকলে অনেক সময় গর্ভপাত/মিসক্যারেজ হয়ে যায়।

২য় আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে ৫ম মাসে।এসময় জানা যায়-~ সন্তান জীবিত নাকি মৃত সে সম্পর্কে জানা যায় ,~ প্লাসেন্টা, যাকে অনেকেই ফুল বা গর্ভফুল নামে জানেন। এটির অবস্থান কোথায় বা সঠিক স্থানে আছে কি না সে সম্পর্কে জানা যায়।প্লাসেন্টার অবস্থানের উপর ডেলিভারি কতটা নিরাপদ হবে সে বিষয়টি বুঝা যায়।

অনেক মা-ই ডেলিভারির পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়।তার কারণ হচ্ছে আগে থেকে এই প্লাসেন্টার অবস্থান সম্পর্কে না জেনে সঠিক ব্যবস্থা নিতে না পারা।সন্তানের কোন জন্মগত কোন ত্রুটি আছে কি নেই।আগে থেকে এই বিষয়টি জানা থাকলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা যায়।আর এর ফলে অনেক সন্তান প্রতিবন্ধকতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

তবে সকল ক্ষেত্রেই সফল বা সুস্থতা লাভ করা যাবে এমনটা নয় । কারণ, কিছু বিষয় আছে যা স্রষ্টীয় অর্থাৎ স্রষ্টার নির্ধারিত ।ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে জানা যায়।

শেষ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয় ৮/৯ মাসে। এই সময় জানা যায়-~ সন্তানের ওজন সম্পর্কে জানা যায়,~প্লাসেন্টাতে কোন সমস্যা আছে কিনা,জরায়ুতে কতটুকু পানি আছে।পানি কম থাকলে সন্তান প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পায় না।এতে করে নির্দিষ্ট ডেলিভারির তারিখ পর্যন্ত সন্তানের বেঁচে থাকাটাই কঠিন।তাই বলে অতিরিক্ত পানি থাকাও ভালো না। এটিও সন্তানের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।সন্তানের পজিশন । সাধারণত মাথা নিচের দিকে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা সহজ।যদি মায়ের হেলথ কন্ডিশন স্বাভাবিক না থাকে তাহলে বাচ্চার পজিশন সঠিক থাকার পরেও সিজার করাতে হতে পারে।আর বাচ্চার পজিশন অন্য রকম হলে বা মায়ের শরীরে রক্তের অভাব দেখা দিলে বা সন্তানের শরীরে নাড়ি পেচিয়ে গেলে সিজারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

দয়া করে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে শুধুমাত্র এটি জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করাবেন না।আল্লাহ যে উপহার দিয়েছেন তা তো বদলানো সম্ভব না।বরং যা জানতে পারলে মা ও সন্তানের সুস্থ থাকাটা অনেকটা নিশ্চিত করতে পারবেন সেটাই জানুন ।

ডাক্তারখানাতে অল্প ভিজিটে নিয়মিত চেকআপ ও পরামর্শ গ্রহন করতে পারবেন। এছাড়াও মাত্র ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে ডিজিটাল আল্ট্রাসনোগ্রামের সুযোগ তো থাকছেই । আবার ব্লাড প্রেসার, ডায়বেটিস এসব খুঁটিনাটি বিষয় টেস্ট করার সুযোগও আছে ।মায়ের যত্ন নিন।একজন সুস্থ মা-ই জন্ম দিতে পারে সুস্থ সন্তানকে।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে,সন্তান প্রসবের সময় (হোক সিজার বা নরমাল)অথবা গর্ভাবস্থার যে কোন সময়ে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে সেটা না জেনে,গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপ জেনে ডেলিভারির অন্তত ৪ মাস আগে থেকে কমপক্ষে দুইজন রক্তদাতা খুঁজে রেখে মা ও সন্তানের সুস্থতা এবং জীবন বাঁচার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলুন।আর পরিবার বা পরিচিতদের মধ্যে কেউ গর্ভবতী থাকলে রক্তদাতা প্রস্তুত রাখতে এবং উপরোক্ত বিষয়ে সচেতন হয়ে সহায়তা করুন

আরও খবর

Sponsered content