প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৭:০৩:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
🔎 অন্তর্বর্তী সরকারের ভিতরে নিরাপত্তা ও কর্তৃত্বের মুখোমুখি সংঘর্ষ

এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট,ঢাকা।।বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশ।একই দিনে একদিকে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে আনা হচ্ছে,অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়োগে সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে মুখ থুবড়ে পড়ছে সরকারের সিদ্ধান্ত। এই দুই ঘটনা মিলিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে—রাষ্ট্র পরিচালনার ভেতরে চলছে এক নীরব কিন্তু গভীর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
তারেক রহমান: ভিআইপি না কি রাষ্ট্রীয় ‘কৌশলগত সুরক্ষা’?
২৩ ডিসেম্বর জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে তারেক রহমানকে ভিআইপি ঘোষণা করে এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া হয়।কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,এটি কেবল সৌজন্যমূলক সিদ্ধান্ত নয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়—
তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক বার্তা ছিল
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা সামনে রেখে তাঁকে এসএসএফ-এর আওতায় আনা হয়
রাজনৈতিক অস্থিরতা এড়াতে তাঁকে কার্যত রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হচ্ছে
বিশ্লেষকদের মতে,এসএসএফ নিরাপত্তা একদিকে সুরক্ষা, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল—যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তাঁর চলাচল ও রাজনৈতিক গতিবিধির ওপর পরোক্ষ নজরদারি রাখতে পারে।
🔥 স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: কেনই বা খলিলুর রহমান?
একই দিনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে এনএসএ খলিলুর রহমানকে বসানোর উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—
👉 জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েও কেন তাঁকে দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে চাওয়া হলো?
সেনাবাহিনীর আপত্তির কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—
খলিলুর রহমানের দ্বৈত নাগরিকত্ব—যা সংবিধান ও নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর আন্তর্জাতিক এজেন্ডা-ঘেঁষা অবস্থান
নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে সেনাবাহিনীকে পাশ কাটানোর অভিযোগ
একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারও পরীক্ষাগার নয়।এখানে সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত মানেই জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়া।”
🩸 ‘নো ব্লাডি করিডোর’: এক মন্তব্যে ফাটল
খলিলুর রহমানের প্রস্তাবিত ‘রোহিঙ্গা মানবিক করিডোর’ ইস্যুই সেনা–বেসামরিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু।
সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়—
এই করিডোর হলে সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে
মিয়ানমার সীমান্তে নতুন সংঘাতের ফ্রন্ট খুলে যেতে পারে
বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক দায় চাপানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।
এই প্রেক্ষাপটেই সেনাপ্রধানের কঠোর উচ্চারণ—
> “নো ব্লাডি করিডোর।”
এই বক্তব্য ছিল কেবল মন্তব্য নয়,বরং একটি কৌশলগত লাল দাগ।
সেনানিবাসে নিষেধাজ্ঞা: নজিরবিহীন বার্তা
অনুসন্ধানে জানা গেছে,সেনাবাহিনীর সঙ্গে চরম বিরোধের জেরে—
খলিলুর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়
সামরিক গোয়েন্দা ও এনএসএ দপ্তরের মধ্যে তথ্য বিনিময় কার্যত বন্ধ হয়ে যায়
একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বাতিল করা হয়
বিশ্লেষকদের মতে,এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর এক স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা—নিরাপত্তা প্রশ্নে আপস নয়।
⚖️ অন্তর্বর্তী সরকার চাপে,সিদ্ধান্ত স্থগিত
এই পরিস্থিতিতে সরকার দুই দিক থেকেই চাপের মুখে—
একদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা
অন্যদিকে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা-সংক্রান্ত রেড লাইন
ফলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়োগ প্রশ্নে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে,যা কার্যত সেনাবাহিনীর ডি ফ্যাক্টো ভেটো ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
🧩 বড় প্রশ্নগুলো রয়ে গেল
তারেক রহমানকে এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া কি সত্যিই কেবল নিরাপত্তার প্রশ্ন,নাকি রাজনৈতিক হিসাব?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি এখনো বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে,নাকি সামরিক সম্মতিনির্ভর?
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা কোথায় গিয়ে থামছে?
একটি বিষয় নিশ্চিত—এই ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ক্ষমতার সমীকরণ তৈরি করেছে,যার প্রতিফলন দেখা যাবে আসন্ন নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে।












