সম্পাদকীয়

মাহমুদুর রহমান: ইতিহাস মুছে ‘বিপ্লবী’ সাজার প্রতারণা

  প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১২:৪৫:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু চরিত্র থাকে,যারা সময়ের স্রোত অনুযায়ী রঙ বদলায়,আদর্শ বদলায়,এমনকি অতীতও বদলে ফেলতে চায়।মাহমুদুর রহমান সেই শ্রেণিরই এক চরম উদাহরণ।আজ যিনি নিজেকে ‘বিপ্লবী কণ্ঠ’ হিসেবে হাজির করছেন, ইতিহাস জানলে বোঝা যায়—তিনি আদতে একজন পুরনো ধান্দাবাজ,সুযোগসন্ধানী ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারিগর।

দৈনিক প্রথম আলোর প্রতি মাহমুদুর রহমানের ক্ষোভ কোনো হঠাৎ আবেগ নয়; এটি বহু বছরের জমে থাকা প্রতিশোধস্পৃহা।২০০৩ থেকে ২০০৫—এই সময়কালে,যখন তিনি বিএনপির ভেতরে ও বাইরে নানা ছক কষে দলটিকে কার্যত ডুবাচ্ছিলেন,তখন প্রথম আলো সেই বাস্তবতা আড়াল করেনি। বরং তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেন,ক্ষমতার দালালি ও বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল।সত্য বলার এই অপরাধই আজও তিনি ভুলতে পারেননি।

এই মাহমুদুর রহমান একদা ছিলেন সালমান এফ রহমান তথা বেক্সিমকো বলয়ের ঘনিষ্ঠ—ক্ষমতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সুবিধাভোগী।ভারতীয় টাটা গ্রুপের দেশীয় দোসর হিসেবেও তাঁর নাম ঘুরে ফিরেছে বিভিন্ন সময়ে।কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে, সেই পুরনো পরিচয় মুছে ফেলে আজ তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী বিপ্লবী’ সেজে বসেছেন।প্রশ্ন হলো—যে মানুষ সারাজীবন ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে উঠেছে,সে হঠাৎ করে বিপ্লবী হয় কীভাবে?

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো,বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ—বিশেষ করে রাজনৈতিক ইতিহাসে অনভিজ্ঞ জেন জি—এই কৃত্রিম বিপ্লবী বয়ানে বিভ্রান্ত হচ্ছে।তারা জানে না,বা জানতে চায় না,এই লোকটির প্রকৃত আমলনামা।তারা জানে না,এই মানুষটি কীভাবে দল ভাঙিয়েছে,প্রতিষ্ঠান দুর্বল করেছে,এবং নিজের স্বার্থে দেশকে বারবার অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

আজ ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের দিবাস্বপ্ন দেখিয়ে মাহমুদুর রহমান যে আগুন নিয়ে খেলছেন,তা নিছক বক্তব্য নয়—এটি একটি সুস্পষ্ট উসকানি। অভিযোগ উঠছে,তাঁর ইশারা-ইঙ্গিতে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—এ ধরনের চরিত্ররা নিজেরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে অন্যদের রাস্তায় নামায়,রক্ত ঝরায়,আর শেষে আবার সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়।

যারা আজ অন্ধের মতো মাহমুদুর রহমানের কথায় তাল দিচ্ছেন,তাদের জন্য একটাই প্রশ্ন—আপনারা কি সত্যিই রাজনীতি করছেন,নাকি একজন পুরনো বাটপারের হাতিয়ার হচ্ছেন? আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র চলে না,ফেসবুক লাইভ দিয়ে বিপ্লব হয় না,আর ইতিহাস মুছে কেউ বিপ্লবী হয়ে ওঠে না।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো—স্মৃতি ফেরানো।নতুন প্রজন্মকে জানানো,কারা অতীতে কী করেছে।নইলে ‘বিপ্লব’-এর নামে যে অরাজকতার ছক কাটা হচ্ছে,তার দায় শেষ পর্যন্ত বহন করতে হবে সাধারণ মানুষকেই।

ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর—ভুলে গেলে সে আবার ফিরে আসে, আরও ভয়ংকর রূপে।

আরও খবর

Sponsered content