শিক্ষা

ইসলামপুর মেয়রের স্ত্রী বিদ্যালয়ে ক্লাস না করিয়ে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা তুলছেন!

  প্রতিনিধি ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ২:৩১:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

জামালপুর প্রতিনিধি।।জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার গাঁওকুড়া জবেদা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছিমা খাতুন।

কিন্তু তাঁকে কখনো ক্লাস নিতে দেখেনি শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি মেয়রের স্ত্রী হিসেবেই পরিচিত,যিনি মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে ঘুরতে আসেন।অথচ বিদ্যালয়ে ক্লাস না করিয়ে তিনি মাসের পর মাস বেতন-ভাতা তুলছেন।বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।মেয়রের স্ত্রী হওয়ায় বিষয়টি জেনেও কখনো ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাছিমা খাতুন ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল কাদের সেখের স্ত্রী।আবদুল কাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।২০১১ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বিদ্যালয়টির চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠা দুজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।তারা প্রথম শ্রেণি থেকে বিদ্যালয়ে পড়ছে। শিক্ষক নাছিমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়,নাছিমা নামের কোনো শিক্ষককে তারা চেনে না।

তবে মেয়রের স্ত্রী পরিচয় দিলে ঠিকই চিনতে পারে।তখন একজন বলে,মেয়রের স্ত্রী মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে আসতেন। কিন্তু কখনো তো আমাদের ক্লাস করাতে দেখি নাই।তিনি যে শিক্ষক,সেটা জানতাম না।কয়েকজন অভিভাবকও একই ধরনের মন্তব্য করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে যান না—বিষয়টি জানতেন না বলে জানালেন জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ।তিনি বলেন,এই প্রথম শুনলেন তাঁর পরিবর্তে অন্য কেউ ক্লাস নেন।বিষয়টি সত্য হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এছাড়া ওই শিক্ষকের ছুটির কোনো আবেদনও তাঁদের কাছে নেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে,বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ।শুধু কার্যালয়ের কক্ষটি খোলা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থী ভর্তির কাজে ব্যস্ত।অন্য শিক্ষকেরা থাকলেও শিক্ষক নাছিমাকে পাওয়া গেল না।তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কেউ ভয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন না।

প্রধান শিক্ষক আকলিমা খাতুন বলেন,সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ে না আসা শিক্ষকদের নাম জানতে চেয়েছিল।আমি তথ্য দিয়েছি।বাকিটা শিক্ষা কার্যালয় বুঝবে।’ তিনি আরও বলেন,নাছিমা খাতুনের পরিবর্তে মর্জিনা আক্তার নামের একজন ক্লাস নেন।

ওই দিন বিদ্যালয়ে ছিলেন না মর্জিনা।তাঁর বাড়িতে গেলে মর্জিনা প্রথম আলোকে বলেন,২০১৯ সাল থেকে নাছিমার পরিবর্তে আমি বিদ্যালয়ে ক্লাস নিই।পারিশ্রমিক হিসেবে নাছিমা প্রতি মাসে আমাকে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা করে দেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে তিনি মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে যান।’

খবর পেয়ে আসেন নাছিমা খাতুন।তিনি বলেন,কে বলছে, আমি আসি না।আমি বিদ্যালয়ে আসি।মাঝেমধ্যে যখন অসুস্থ থাকি,তখন মর্জিনা আমার পরিবর্তে ক্লাস নেন।তবে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

নাছিমা ওই দিনের পর বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন কি না,জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আকলিমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, ‘নাছিমা এখনো বিদ্যালয়ে আসেন না।আপনি (প্রতিবেদক) যেদিন আসছিলেন,সেদিনই আসছিলেন।এরপর আর আসেননি।’

পৌর মেয়র আবদুল কাদের বলেন,তাঁর স্ত্রী অনেক অসুস্থ। তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তারা জানেন।

অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যে তাঁর স্ত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না।সেই দিনগুলোতে মর্জিনা ক্লাস নেন।বিদ্যালয়ে না গিয়ে বেতন-ভাতা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুব সৎভাবে চলি।আমার আয়ের বেশির ভাগ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিই।আমার স্ত্রীর বেতনে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ হয়।’

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গাঁওকুড়া জবেদা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারিকরণ হয়। ১৯৯১ সাল থেকে নাছিমা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিদ্যালয়ে নাছিমাসহ শিক্ষক আছেন পাঁচজন।

আরও খবর

Sponsered content