শিক্ষা

আমরা অশিক্ষিতরা ভুল করতে পারি-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে—এটা মেনে নিতে পারছি না!’

  প্রতিনিধি ৬ মে ২০২৩ , ৬:০৬:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

জাবি প্রতিনিধি।।আমরা অশিক্ষিত মানুষেরা ভুল করতে পার-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে—এটা মেনে নিতে পারছি না!’নতুন কেনা জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়া নিয়ে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা।দোকানি ও দোকান কর্মচারীকে মারধর করেই ক্ষান্ত হননি,অনুমতি ছাড়া দোকান না খোলার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

শনিবার আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকানমালিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী রোমেন রায়হান।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ইসলামনগর বাজারে এক জুতার দোকানে এই কাণ্ড করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের শনাক্ত করা যাচ্ছে।

অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের ছাত্র ও শহীদ রফিক জাব্বার হলের আবাসিক ছাত্র সাব্বির হোসেন নাহিদ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র মেহেদী হাসান জয়।সাব্বির হোসেন নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং মেহেদী হাসান জয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

অভিযোগে রোমেন রায়হান উল্লেখ করেন,ওই এলাকা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।নিচতলায় তাঁর জুতা ও তৈরি পোশাকের দোকান।শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অভিযুক্তরা তাঁর দোকান থেকে এক জোড়া জুতা কেনেন।দোকানের কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বিক্রয়কৃত জুতার জোড়াটি পালিশ করতে থাকেন।দ্রুত করতে বলা নিয়ে অভিযুক্তরা তাঁর দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি কিল,ঘুষি,লাথি মারেন।দোকানের ক্যাশে বসে থাকা রোমেনের বড় ভাই নিয়াজ রাসেল শেখ আটকাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়।পরে কর্মচারীকে বাইরে বের করে মারধর করেন অভিযুক্তরা।

একপর্যায়ে সাব্বির ও মেহেদী তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেন এবং তাঁদের অনুমতি ছাড়া খুললে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার ও তাঁকে (রোমেন) দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।

ওই বাড়ির মালিক ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ খান বলেন, ‘জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় আমাদের সামনে কর্মচারীকে মারধর শুরু করে।সিসিটিভি ফুটেজে সব আছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষেরা ভুল করতে পারি। তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে—এটা মেনে নিতে পারছি না!’

ভুক্তভোগী কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ওনারা জুতা কেনার পর, আমাদের দোকানের নিয়ম অনুযায়ী আমি পালিশ করতে থাকি। তাঁরা তাড়াহুড়ো শুরু করলে আমি একটু সময় লাগবে বলে তাঁদের জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমি কান ধরে ওঠবস এবং পা ধরে মাফ চাওয়ার পরও আমাকে মারতে থাকে এবং আমার গোপনাঙ্গে জোরে লাথি মারে সাব্বির ভাই। এখন আমার সারা শরীরের ব্যথা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয় বলেন, ‘জুতা কেনার পর ওই জুতার কোনো ইনটেক কপি না থাকার কারণে ওটা ওরা পালিশ করতে থাকে। তাড়াতাড়ি করতে বললে ওই কর্মচারী খারাপ ব্যবহার করে। তা ছাড়া জুতা কেনার পর রসিদ না দিয়ে আমাদের ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দেব।’

এই অভিযোগের ব্যাপারে দোকানমালিক রোমেন রায়হান বলেন, ইনটেক জুতা দেওয়া হয়নি—এ অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁরা যেমন চেয়েছেন, তেমনি দেওয়া হয়েছে। আর রসিদ তখন তাঁরা চাননি বলে দেওয়া হয়নি।

থানায় লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল খন্দকার বলেন, ‘একটি অভিযোগ করা হয়েছে বলে শুনেছি। সেটা তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানায় গেলে পুরো ঘটনা জানতে পারব।’

আরও খবর

Sponsered content