প্রতিনিধি ১৭ মার্চ ২০২৩ , ৫:১৬:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি।।গাজীপুরে একদল হিজড়া বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা।করছে ধানসহ কৃষি ফসলের আবাদ।
হিজড়াদের দাবি,সমাজের মানুষ সুযোগ দিলে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন।
হিজড়ারা সাধারণত মানুষের কাছে চেয়ে এবং বিভিন্ন দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি থেকে টাকা তুলে থাকে।
এতে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ তাদের প্রতি বিরক্ত হয়।অনেক ক্ষেত্রে জোর-জুলুম করেও মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে থাকে।
এ পেশা থেকে একদল হিজড়া মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।তারা আর মানুষের কাছে চেয়ে ও জোর-জুলুম করে টাকা-পয়সা নিতে চায় না।তারা পরিশ্রম করে সৎ পথে আয় করতে চায়। তাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানার বাইমাইল এলাকার একদল হিজড়া বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা। তারা এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষসহ কৃষি ফসলের আবাদ করছেন।
এলাকাবাসী ও হিজড়ারা জানান,গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানার বাইমাইল বাঁশতলা এলাকায় ৩২ জনের একদল হিজড়া বসবাস করে।তারা বিভিন্ন দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি মানুষের কাছে চেয়ে টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলতেন।এতে প্রায় মানুষ বিরক্ত হয়। আর এভাবে টাকা তোলাটাও তাদের বিবেকে বাঁধে।তাই তারা ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।সমাজের বিত্তবান মানুষের কৃষি জমি বর্গা নিয়ে সেখানে নতুন করে ফসলের আবাদ করছেন। চলতি বছর তারা বাইমাইল এলাকায় ১৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন।
এসব জমিতে ধান,পেঁয়াজ,রসুন,মিষ্টি কুমড়া,টমেটোসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের আবাদ শুরু করেছেন।তারা নিজেরাই ফসলের পরিচর্যা করছেন এবং পাশাপাশি দিনমজুর দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
অন্যের কাছে হাত না পেতে সুযোগ দিলে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চান।তারা কর্ম করে চলতে চান।তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে ওইসব হিজড়াদের দাবি,কর্ম করে খেতে সার্বিক দিক দিয়ে যেন বিত্তবানরা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।তাহলে তারা সমাজের সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবেন।
হিজড়াদের দাবি,সাধারণ মানুষের মতো তাদের হাত-পা আছে,তারা সুস্থ,পরিশ্রম করতে পারেন।তাই তারা সাধারণ মানুষের মতো কর্ম করে চলতে চান।এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন।সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করে জীবনযাপন করতে পারবেন।হিজড়ারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় কৃষি আবাদ করছেন। এছাড়া তাদের বাড়িতে রয়েছে গরুর খামার।
হিজড়ারা জানান,ফয়সাল আহম্মেদ ও রমিজ উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি তাদের পরিত্যক্ত ১৩ বিঘা জমি বর্গা দিয়েছেন চাষবাস করতে।এজন্য তাদের কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয়নি।ওই জমিগুলো ছিল জঙ্গলে ভরা চাষের অনুপযোগী। পরে দিনমজুর ও তারা পরিশ্রম করে জমিগুলো চাষের উপযোগী করেন।সেখানে ১১ বিঘা জমিতে ধান চাষ এবং দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ,রসুন,টমেটো ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছেন।এতে তাদের প্রথম বছর অনেক টাকা খরচ হয়েছে।বিভিন্ন এলাকায় আরও অনেক জমি পরিত্যক্ত রয়েছে।ওইসব জমির মালিকরা যদি তাদের দিকে তাকায়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়,তাহলে তারা আগামীতে আরো ব্যাপক আকারে ধানসহ কৃষি আবাদ করতে পারবেন।
জাহিদুল ইসলাম কালু (শিল্পী) নামে এক হিজড়া বলেন, আমাদের হিজড়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই এতে আমাদের চাহিদা পূরণ হয় না।ফলে নানা চিন্তা-ভাবনা করে উদ্যোগ নেই।পাশাপাশি কৃষি আবাদ করবো। পরে এ বছর বর্গা নিয়ে ১৩বিঘা জমিতে ধান,পেঁয়াজ,রসুন, টমেটো ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল লাগিয়েছি।
তিনি বলেন,দেশের মানুষ দেখুক।আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা কিছু করতে পারি।সমাজের মানুষ সুযোগ দিলে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি।সময় মতো ধান কাটতে পারলে নিজেদের চাহিদা পূরণ হয়েও বাজারে বিক্রি করতে পারবো।
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,যেকোনো কৃষককেই আমরা সরকারিভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকি।তবে এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়।তবে হিজড়ারা যোগাযোগ করলে আমরা সবার মতো তাদেরও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবো।