কৃষি সংবাদ

মিধিলির ল্যান্ডফলে ২ লাখ কৃষকের ক্ষতি ১৮২ কোটি টাকা

  প্রতিনিধি ২২ নভেম্বর ২০২৩ , ১২:১৫:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল ইসলাম রবি।।চলমান মাসের গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র ল্যান্ডফলে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২ লক্ষ ৮ হাজার ৯১৬ জন কৃষকের ১৯ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমির খেসারী ডাল ও শীতকালিন সবজি ক্ষেত। আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমির ফসলি ক্ষেত। আর্থিকভাবে ক্ষতির পরিমান ১৮১ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০৯ টাকা। চলমান মৌসুমে কৃষকরা ৭ লক্ষ ৯ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, গম, শীতকালীন সবজি, খেসারি, সরিষা, মরিচ, তরমুজ, পেঁপে ও পান চাষ করেছিল। বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বরিশাল অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান।

তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে চলমান মৌসুম শষ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বরিশালের ৬ জেলায় ফসলের অধীন জমির পরিমাণ ছিল ৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৯ হেক্টর, মাঠে দন্ডায়মান জমি হল ৭ লক্ষ ৯ হাজার ১৮০ হেক্টর, আক্রান্ত জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৬৬ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ লক্ষ ৯ হাজার ৭২৯৫ হেক্টর জমির ফসল, আংশিক ক্ষতি হয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রুপ নিয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির ফসল। যা ক্ষতির পরিমানে শতকরা ২.৭৭ পারসেন্ট হয়েছে। উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ ৫১ হাজার ৭৩ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মোঃ জেবায়দুল আলম জানিয়েছেন, ১ লক্ষ ৫ হাজার ২৪৮.৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬ হাজার ২২৬.৭৭ হেক্টর জমির ফসল। যারমধ্যে রোপা আমন ৪০,৭১৫ হেক্টর , মরিচ ২.৭৭ হেক্টর, খেসারী ৫,১০০ হেক্টরের মধ্যে পুরো নষ্ট ২,১২ হেক্টর ও শাকসবজি ২৬৯ হেক্টরের মধ্যে পুরো নষ্ট ৪৩ হেক্টর, পান ৯০ হেক্টর, কলা-পেঁপেসহ অনান্য ৫০ হেক্টরের মধ্যে নষ্ট ৫ হেক্টর জমির ফসল। এ জেলায় মোট ৩৮ হাজার ৫৭৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ফসল।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানিয়েছেন, ৪৯ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা ৪৭ হাজার ৪২৬ জন কৃষকের ফসল দুর্যোগের কবলে পড়েছে। যারমধ্যে আমন রোপা ৪১,৮০১ হেক্টর, সরিষা ২২৮ হেক্টর, খেশারী ১,৬১৪ হেক্টর, গম ৪০ হেক্টর, শীতকালীন সবজি ৫,৫৩০ হেক্টর ও পান ৫৫ হেক্টর। তবে সম্পূর্ণভাবে কোন ফসলই ক্ষতি হয়নি। আক্রন্ত হয়ে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৭৫ হাজার টাকা।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ কবলে পড়েছিল ২২ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমির ফসল। সম্পূর্ণভাবে ২০০ হেক্টর জমির শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। এবং আক্রান্ত হয়েছে ৯৪০ হেক্টর জমি শাকসবজি। এছাড়া আক্রন্ত হয়েছে রোপা আমন ১৮,৮২২ হেক্টর, খেসারি ৩ হাজার হেক্টর, মরিচ ৮ হেক্টর, সরিষা ১৮ হেক্টর ও তরমুজ ১০০ হেক্টর। ৪৪ হাজার ৯০৬ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মুরাদুল হাসান জানিয়েছেন, ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ হাজার ২২৮ হেক্টর জমির ফসল। যারমধ্যে রোপা আমন উফশী ৫,২০৩ হেক্টর, স্থানীয় ১৫,০৯৭ হেক্টর, সরিষা ২১৬ হেক্টর, খেসারী ৩,০১০ হেক্টর ও শাকসবজি ৩,৪৭৫ হেক্টর। এ জেলায় মোট ২৯ হাজার ৪৪৭ জন কৃষকের ১৮ কোটি ৪৬ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে।

পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মুরাদুল হাসান জানিয়েছেন, ৬১ হাজার ২২০ হেক্টরের জমির ফসল ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে আক্রন্ত হয়েছে। যারমধ্যে রোপা আমন ৫৮ হাজার হেক্টর, সরিষা ২০ হেক্টর, খেসারী ২ হাজার হেক্টর ও শাকসবজি ১ হাজার হেক্টর ও পান ২০০ হেক্টর। এ জেলায় মোট ১৫ হাজার ৯০০ জন কৃষকের প্রায় ১ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমন ১৮.৫৪%, শাকসবজি ৪২.৮%, খেসারি ৯২.৬৮%, সরিষা ২৫%, পেঁপে ৫৭.৬% ও পান ১৪.৪% আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে শাকসবজি নষ্ট হয়েছে ১৫%। মোট ৫১ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমির মধ্যে দুর্যোগের কবলে পড়ে ১২ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমি। ২০ হাজার ৯৪০ জন কৃষকের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০ কোটি টাকা।

আরও খবর

Sponsered content