আন্তর্জাতিক

সীমান্তবর্তী গ্রামের নারী ও শিশুদের ওপরে বিএসএফ সদস্যরা লাঠিচার্জ

  প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:২৩:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি সীমান্তবর্তী গ্রামের নারী ও শিশুদের ওপরে বিএসএফ সদস্যরা লাঠিচার্জ করেছেন,এই অভিযোগের সরেজমিন তদন্তে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) একটি মানবাধিকার সংগঠন সেখানে গিয়েছিল।

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর জানিয়েছে,মলুয়াপাড়া নামের ওই গ্রামটির মানুষ বেশ কিছুদিন ধরেই নতুন করে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিরোধিতা করছিলেন।গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএসএফ যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে বেড়ার কাজ শুরু করলে বিক্ষোভ করেন দুইশো নারী ও শিশু।গ্রামবাসীদের অভিযোগ ওই বিক্ষোভের ওপরেই লাঠি চালায় বিএসএফের পুরুষ সদস্যরা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি সীমান্তবর্তী গ্রামের নারী ও শিশুদের ওপরে বিএসএফ সদস্যরা লাঠিচার্জ করেছেন,এই অভিযোগের সরেজমিন তদন্তে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) একটি মানবাধিকার সংগঠন সেখানে গিয়েছিল।ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন গ্রামের ১১ জন নারী।বিএসএফ অবশ্য গ্রামবাসীদের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।তারা জানিয়েছে,সেদিন কোনো লাঠিচার্জই হয়নি।গ্রামবাসীরা সরকারি যন্ত্রপাতি ভাঙ্গতে উদ্যত হলে তারা লাঠি উঁচিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছে মাত্র।

মলুয়াপাড়ার বাসিন্দা জরিনা বিশ্বাস টেলিফোনে গনমাধ্যমে বলছিলেন, ‘গত আট তারিখ ছিল হাটবার,তাই পুরুষরা কেউ বাড়ি ছিল না।সেই সুযোগে বিকেল তিনটের দিকে রাস্তার রোলারসহ যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে তারকাটার বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করে বিএসএফ। আমরা যখন বাধা দিতে যাই,আমাকেই প্রথমে লাঠি দিয়ে মারে তারা।বিএসএফের কোনও নারী কনস্টেবল ছিল না,সবাই পুরুষ মানুষ।’

তিনি আরও বলেন,আমার পিঠে লাঠি দিয়ে মারে আর সঙ্গে হিন্দিতে অশ্রাব্য গালিগালাজ করছিল ওরা।একটা বিএসএফ আমার বাঁ হাত ধরে রেখেছিল আর গালিগালাজ করে মারছিল।আবার পাথরও ছুঁড়ছিল।এমনকি বাচ্চা ছেলে মেয়েরা, যারা মোবাইলে ভিডিও করছিল,তাদের তাড়া করে মোবাইল কেড়ে নিয়েছে।’

ওই গ্রামের বাসিন্দারা বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে।তারা বলছেন,যেখানে বেড়া দেওয়ার কথা হচ্ছে,তাতে গ্রামের একটা বড় অংশই বেড়ার বাইরে চলে যাবে।ফলে মূল ভূখণ্ডে আসার জন্য তাদের বেড়ার মাঝে মাঝে থাকা গেট ব্যবহার করতে হবে।

ওই গেটগুলো বিএসএফ সময় অনুযায়ী খোলে আর বন্ধ করে।গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার বিশ্বাস বলেন,তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার যে নিয়ম,তা হলো সীমান্ত থেকে দেড়শো গজ দূরে। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।বিএসএফ বলেছিল রাস্তা তৈরি করে দেবে,তাতেও আমরা রাজী ছিলাম।কিন্তু আমাদের গ্রামে কোথাও হাজার গজ,কোথাও ১ হাজার ৮০০ গজ ভেতরেও বেড়া দেওয়া হচ্ছে।এর ফলে ২৩০ টা ঘর বেড়ার বাইরে চলে যাবে।’

তার প্রশ্ন,ভারতীয় হয়েও তারা কেন বেড়ার বাইরে থাকতে বাধ্য হবেন,আর কেনই বা নিজের দেশেই তাদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করবে বিএসএফ!শনিবার বিশ্বাসদের গ্রামে সরেজমিনে তদন্তে গিয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের একটি দল।

ওই দলটির নেত্রী ও সংগঠনটির কৃষ্ণনগর ইউনিটের সম্পাদক মৌটুলি নাগ সরকার জানিয়েছেন,গ্রামে যেদিন থেকে মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে গেছে বিএসএফ,সেদিন থেকেই গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ করছেন।তারা এ নিয়ে মহকুমা শাসকের কাছে একটা ডেপুটেশনও দিয়েছিলেন। ৮ তারিখ প্রায় শ দুয়েক নারী বিক্ষোভ করেন।তখনই বিএসএফ লাঠি চার্জ শুরু করে।প্রায় একশো দেড়শো মিটার পর্যন্ত লাঠি চার্জ করে এগিয়ে গিয়েছিল বাহিনী।

নাগ সরকার বলেন,একজন নারী আমাদের জানিয়েছেন, তার কোলে শিশু সন্তান ছিল।বিক্ষোভের মধ্যে শিশুটি পড়ে যায়,তাকে সরিয়ে দিয়ে ওই নারীকে মেরেছে বিএসএফ। নারীরা আমাদের তাদের চোট আঘাতও দেখিয়েছেন-কারও পায়ে,কারও কোমরে,কারও পিঠে আঘাত লেগেছে।কারও হাত পা ভাঙ্গে নি,কিন্তু একজনের মাথা ফেটেছে।’

গ্রামে যেদিন থেকে মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে গেছে বিএসএফ,সেদিন থেকেই গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ করছেন।
গ্রামে যেদিন থেকে মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে গেছে বিএসএফ,সেদিন থেকেই গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ করছেন।
গ্রামবাসীদের কাছে ওই দিনের লাঠি চার্জের ঘটনার ভিডিও তারা দেখেছেন বলে জানান এপিডিআর নেত্রী।গ্রামবাসীদের অভিযোগ আর এপিডিআরের সরেজমিন তদন্তের প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলা যোগাযোগ করেছিল বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের সদর দপ্তরের।

বাহিনীর মুখপাত্র ও ডিআইজি এ কে আরিয়া বলেছেন, ‘সেদিন ওখানে লাঠি চার্জের কোনো ঘটনা হয় নি।স্থানীয় পুলিশকেও আমরা খবর দিয়েছিলাম।গ্রামের মানুষ বিএসএফ প্রহরীদের দিকে পাথর ছুঁড়ছিলেন আর জেসিবি প্রভৃতি যে সব মাটি কাটার সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেগুলোর ক্ষতি করার চেষ্টা করছিলেন।বাহিনী গ্রামবাসীদের ওই প্রচেষ্টায় বাধা দিয়েছে মাত্র।’

গ্রামের মানুষ বিএসএফ প্রহরীদের দিকে পাথর ছুঁড়ছিলেন আর জেসিবি প্রভৃতি যে সব মাটি কাটার সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,সেগুলোর ক্ষতি করার চেষ্টা করছিলেন।
গ্রামের মানুষ বিএসএফ প্রহরীদের দিকে পাথর ছুঁড়ছিলেন আর জেসিবি প্রভৃতি যে সব মাটি কাটার সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,সেগুলোর ক্ষতি করার চেষ্টা করছিলেন।
ডিআইজি আরিয়া বলেন, ‘নারী কনস্টেবল ছিলেন না বলে যে অভিযোগ আপনার কাছে করেছেন গ্রামবাসীরা,সেই প্রসঙ্গে বলি,সব জায়গায় তো নারী কনস্টেবল থাকেন না,তাদের খবর দিলে আসতে কিছুটা সময় তো লাগেই।’

কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে গ্রামবাসীরা যে অভিযোগ তুলেছেন,সেই ব্যাপারে বিএসএফ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওখানে নতুন করে বেড়া দেওয়া হচ্ছে না।নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যে বেড়া ওখানে দেওয়া হয়েছিল,সেখানেই নতুন করে কাঁটাতার লাগানো হচ্ছে।

নারী কনস্টেবল ছিলেন না বলে যে অভিযোগ আপনার কাছে করেছেন গ্রামবাসীরা,সেই প্রসঙ্গে বলি,সব জায়গায় তো নারী কনস্টেবল থাকেন না,তাদের খবর দিলে আসতে কিছুটা সময় তো লাগেই।’

ডিআইজি জানান,পুরোনো কাঁটাতারের বেড়া অনেক জায়গাতেই আবহাওয়ার কারনে আর চোরাকারবারীরা কেটে দেওয়ার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে।সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে কোথাও দেড়শো মিটার কোথাও ১৮০ মিটার দূরে বেড়া দেওয়া হচ্ছে।ওই জমি কিন্তু বিএসএফ অনেক আগেই অধিগ্রহণ করে রেখেছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন,নতুন করে যে বেড়া দেওয়া হচ্ছে,সেই কাঁটাতার এমনভাবেই তৈরি যে ওগুলো পাচারকারীরা কাটতেও পারবে না আবার ওতে জং ও ধরবে না।তার মতে,এরকম বেড়া বসানো হলে পাচারকারীরা আর আন্ত-সীমান্ত অপরাধীরাই সমস্যায় পড়বে,তাই গ্রামবাসীদের তারাই পিছন থেকে মদত দিয়ে এই সব প্রতিবাদ,বিক্ষোভ করাচ্ছে।গ্রামের অনেকেও সরাসরি বা পরোক্ষভাবে চোরা কারবারে জড়িত।তারা তো চাইবেই না যে এরকম আধুনিক বেড়া বসানো হোক।

ওদিকে উত্তরবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে ডিসেম্বর মাসে বিএসএফের গুলিতে এক ভারতীয় গ্রামবাসীর নিহত হওয়া নিয়ে শনিবার সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী।কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গায় একটি রাজনৈতিক সভায় ব্যানার্জী জানান,প্রেমকুমার বর্মন, বয়স ২৩-২৪। বেঙ্গালুরুতে কাজ করত।চার বছর পর বাড়ি ফিরেছিল। গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে মাঠে গিয়েছিল।সেখানে দুই হাত দূর থেকে বিএসএফ জওয়ানরা তাকে গুলি করে মেরেছে।

অভিষেক ব্যানার্জী বলেন, ‘বিএসএফ এর উপদ্রবের কথা সকলেই জানেন।এটা বলছি কারণ,এই রাজবংশী,তরতাজা যুবককে যে ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করা হলো,তা নিয়ে রাজবংশীদের প্রতি দরদ দেখানো ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার ডেপুটি, এখানকার বিজেপি সাংসদকে প্রশ্ন করতে চাই,প্রেমকুমার কি জঙ্গি ছিল?’

ব্যানার্জী প্রশ্ন তোলেন,কী ছিল তার অপরাধ,সে রাজবংশী? সকাল ৭টায় মাঠে তার কাছ থেকে বোমা বা বন্দুক পাওয়া গিয়েছিল,নাকি যুদ্ধ করতে গিয়েছিল সে,গরু পাচার করছিল নাকি সোনা মিলেছিল? বিএসএফ এর নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকা অমিত শাহ,কোচবিহারের লজ্জা নিশীথ প্রামাণিককে প্রশ্ন করছি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম, অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’

বিএসএফের গুলিতে নিহত বর্মনের ময়না তদন্তের রিপোর্টও জনসভায় দেখান ব্যানার্জী।সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে তিনি জানান,১৮০ টা গুলির টুকরো পাওয়া গেছে ওই যুবকের দেহে।যে ছররা বন্দুক ভারত শাসিত কাশ্মীরে চালানো হয়, সেই গুলি চালানো হয়েছিল প্রেমকুমার বর্মনের পায়ে।

আরও খবর

Sponsered content