রাজনীতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে লবিংয়ে নেমেছেন তার কন্যা মনিকা ইউনূস

  প্রতিনিধি ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:০২:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ড পাওয়া শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে লবিংয়ে নেমেছেন তার কন্যা মনিকা ইউনূস।সরকারের সঙ্গে আপোষের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরকে দেয়া সাক্ষাতকারে মনিকা এসব বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

গত পহেলা জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনে দায়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে শ্রম আদালত।

ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা কল্যাণ তহবিলে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ না দেয়া,শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা,গণছুটি নগদায়ন না করার মতো অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।

সাজা পেয়ে শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে ইউনূস।তার বিরুদ্ধে রয়েছে আরো অনেক মামলা।গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলায় ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।

এদিকে ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে নানাভাবে চলছে আন্তর্জাতিক লবিং।সম্প্রতি তাকে ‘আইনি হয়রানি’ বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন হিসেবে একটি যৌথ বিবৃতি ছাপা হয়েছে,যে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর।

এর আগে বিচার বন্ধে বিবৃতি দিয়েছেন কয়েকজন নোবেলজয়ী।যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ইউনূসের পরিচিত আছে।

আর এসব লবিং,বিবৃতি ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিচার বন্ধের আহ্বানকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ ও হস্তক্ষেপের সামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউনূসের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বলয়ের চলমান লবিংয়ের অংশ হিসেবে এবার মাঠে নেমেছেন তার কন্যা মনিকা ইউনূস।সম্প্রতি তিনি সিএনএন ও চ্যানেল ফোরে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার বাবার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

সোপরানো সঙ্গীত শিল্পী; যিনি বিভিন্ন অপেরা ও দলের সাথে সঙ্গীত পরিবেশন করে বেড়ান। তার মা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভেরা ফরস্তেনকো ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম স্ত্রী।

পশ্চিমা দুই গণমাধ্যমকে মনিকা বলেন,ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দেওয়ানি আদালতেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব ছিলো।কিন্তু তা না করে এগুলোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

তবে ইউনূস কন্যার দাবির সঙ্গে একমত নন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।তিনি ইউনূসের মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে আদালতে লড়েছেন।

খুরশীদ আলম বলেন,মনিকা ইউনূস যে কথাটা বলতে চাচ্ছেন,তাতে পরোক্ষভাবে উনি স্বীকার করেই নিলেন যে, এখানে শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়েছে।শ্রম আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০১৫ আইএলও কর্তৃক স্বীকৃত।এবং সেখানে ফৌজদারি একটা আলাদা চ্যাপ্টার আছে।

এদিকে ডক্টর ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনিকা দাবি করলেও আসলে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সরকারিভাবে। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক।

আর ড. ইউনূস ছিলেন এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারের নিযুক্ত ও বেতনভুক্ত একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক; কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠাতা নন তিনি।

গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের ঋণগ্রস্ত করে তুলছে এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন, এমন অভিযোগগুলোও মনিকার সামনে আনেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন,ক্ষুদ্রঋণ সুনির্দিষ্ট একটি মডেল,যা সঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে অন্য যেকোনো জিনিসের মতোই তা ব্যর্থ হতে পারে।

‘যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করলে,যেকোনো কিছুই ব্যর্থ হতে পারে।আমার ধারণা,এই সমালোচনা তাদের কাছ থেকেই এসেছে যারা,গ্রামীণে ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট মডেল অনুসরণ করেননি,’ দাবি মনিকা ইউনূসের।

২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের তখন গ্রেপ্তার করে কারাগারে ঢোকানো হয়।

আর সেই রাজনীতি নিষিদ্ধ ও রাজনীতিবিদদের জেল-জুলমের সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন একটি রাজনৈতিক দল খুলতে মাঠে নামেন।জরুরি অবস্থার মধ্যেই তিনি নাগরিক শক্তি নামের রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য ব্যাপক তোড়জোড় চালিয়েছিলেন,যা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়।

রাজনীতিতে ইউনূসের আগ্রহের বিষয়ে মনিকা বলেন,শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি একবারের জন্য এটা ভেবেছিলেন।তবে তার রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।

তবে উইকিলিকস থেকে ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে দেখা যাচ্ছে,বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিলেন এই নোবেলজয়ী।

কোনো এক সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূস একসঙ্গে কাজ করেছেন জানিয়ে মনিকা সরকারের সাথে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।

‘আমি আশা করি,সেই সময়টি আবার ফিরে আসুক।যদি তারা (শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূস) আবারো একসঙ্গে কাজ করেন,তাহলে তা হবে চমৎকার,’ বলেন মনিকা।

তিনি আরো বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে বিদেশি কৌঁসুলি নিয়োগের কথাও ভাবছেন তারা।

এ বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন,এক্সপার্ট যদি আসে, তাদেরকে অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাবো।

‘এখানে লুকোচুরির কোনো বিষয় নেই।যা হয়েছে,প্রকাশ্য আদালতে হয়েছে।ড. ইউনূস সেটা চ্যালেঞ্জ করেছেন, আপিল পেন্ডিং,’ বলেন দুদকের এই আইনজীবী।

আরও খবর

Sponsered content