প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১২:৩৭:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।শহীদ ওসমান হাদী ছিলেন এক বিরল ব্যক্তিত্ব—যার জীবনজুড়ে ছিল মেধা,শালীনতা,আদর্শবাদ ও গভীর দেশপ্রেমের সমন্বয়।অনেকের অজানা এমন কিছু তথ্য তার জীবনের ব্যাপ্তি ও উচ্চতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
হাদী প্রথাগত স্কুল শিক্ষায় বেড়ে ওঠেননি।তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠেন এবং আলিম পাস করেন। দাখিল পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে তিনি ট্যালেন্টপুল বৃত্তি অর্জন করেন।দাখিল পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম স্থান এবং আলিম পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন তার অসাধারণ মেধার সাক্ষ্য বহন করে।

উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মিশরের ঐতিহ্যবাহী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ লাভ করেন।তবুও গভীর দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি বিদেশে না গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।সেখানে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) বিষয়ে অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।তবে বিদেশের আরাম ও সুযোগ-সুবিধা তাকে আটকে রাখতে পারেনি।দেশের টানে তিনি অল্পদিনের মধ্যেই দেশে ফিরে আসেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তিনি শিক্ষকতা করেছেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী,ভদ্র ও সৌম্য আচরণের মানুষ।তার এই ব্যক্তিত্বের কারণে অনেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন।কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন—বিবাহ আল্লাহর নির্ধারিত সিদ্ধান্ত।তাই তিনি অযথা সম্পর্ক বা অনৈতিক প্রেমে জড়াননি; পারিবারিক সিদ্ধান্তেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বর্তমানে তিনি এক সন্তানের জনক ছিলেন।
হাদী কখনোই কোনো ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না—ছাত্রলীগ,ছাত্রদল,ছাত্রশিবির বা ছাত্র ইউনিয়ন—কোনোটির সাথেই নয়। তার বিশ্বাস ছিল,এ দেশের ছাত্র রাজনীতি মূলত তোষামদির সংস্কৃতিকে উসকে দেয়।এই মানসিকতা তিনি ঘৃণা করতেন।তিনি ছিলেন একান্তই আদর্শবাদী ও খাঁটি দেশপ্রেমিক।তার মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকত।তিনি কখনো কারও সঙ্গে কটু ভাষায় কথা বলেননি, এমনকি দুষ্টুমির ছলেও কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলার নজির নেই।মানবিকতা ও সৌজন্য ছিল তার চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হাদী বিশ্বাস করতেন—“বাঁচলে বীরের মতো,মরলেও বীরের মতো।” এই চেতনা তিনি তার বন্ধুদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে,আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন,তাকে কখনো নিরাশ করেন না।জীবনের নানা পর্যায়ে তিনি সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখেছেন।তিনি প্রায়ই বলতেন—রাজপথে বুক পেতে যদি বুলেটের আঘাতে শহীদ হতে হয়,তবে হাসিমুখেই তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছাবেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে,তার সেই আকাঙ্ক্ষাই বাস্তব রূপ পেয়েছে—শহীদি মৃত্যু তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
আজ শহীদ ওসমান হাদী শুধু একটি নাম নয়—তিনি এক আদর্শ,এক প্রেরণা।আমরা সবাই তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি—আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন।আমিন।

















