অপরাধ-আইন-আদালত

শফিউল্লাহ মিয়ানমার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ইয়াবা উখিয়া আশ্রয়শিবিরে নিয়ে আসে!

  প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২২ , ৭:৫২:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:-মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নাফনদী অতিক্রম করে দৈনিক কী পরিমাণ ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে—এর সঠিক তথ্য কোথাও নেই। তবে প্রায় প্রতিদিন বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের (আইসের) বড় বড় চালান ধরা পড়ছে।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১ ডব্লিউ) আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে শফিউল্লাহ (৩৮) নামের এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শফিউল্লাহ লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ই-ব্লকের ২ নম্বর শেডের বাসিন্দা আবদুস সালামের ছেলে। পুলিশ দাবি করছে, শফিউল্লাহ মিয়ানমার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ইয়াবা উখিয়া আশ্রয়শিবিরে নিয়ে আসেন। গ্রেপ্তারের পর শফিউল্লাহ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গভীর রাতে উখিয়ার পাতাবাড়ি পাহাড়ি এলাকা থেকে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে।

পরে শফিউল্লাহ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তিনি নিজেই প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১২০ কোটি টাকার দামের ৩০ থেকে ৪০ লাখ ইয়াবা মিয়ানমার থেকে নানা কৌশলে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে নিয়ে আসেন। পরে আশ্রয়শিবির থেকে এসব ইয়াবা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়।

ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত আশ্রয়শিবিরের কিছু প্রভাবশালী রোহিঙ্গা ছাড়াও উখিয়া এবং মিয়ানমারের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্যের নাম প্রকাশ করেছেন শফিউল্লাহ।আশ্রয়শিবিরে ইয়াবার চালান নিয়ে আসার জন্য আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রোহিঙ্গা জড়িত আছেন, যাঁদের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও উখিয়ার প্রভাবশালীদের গভীর যোগাযোগ রয়েছে।এ ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তালিকাভু্ক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও রোহিঙ্গা আবু ছৈয়দের নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি দল অটোরিকশায় ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে কক্সবাজার শহরের দিকে যাচ্ছিল।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ওই অটোরিকশা থামিয়ে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ৫০ হাজার ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আবু ছৈয়দকে (২৩) গ্রেপ্তার করে।

এ সময় অন্য চারজন যাত্রী কৌশলে পালিয়ে যান। আবু ছৈয়দ কুতুপালং ক্যাম্পের সি ব্লকের ১ নম্বর শেডের বাসিন্দা। আবু ছৈয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ ওই দিন রাতে উখিয়ার হলদিয়াপালং ও মরিচ্যাবাজারে অভিযান চালিয়ে শাহেব মিয়া ওরফে নয়ন (২৪) ও মো. আকরামকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। পরে গতকাল রাতে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবির থেকে শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, শফিউল্লাহ ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) আটটি মামলার পলাতক আসামি। আজ রোববার শফিউল্লাহকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, গত জুনে মিয়ানমার থেকে পাচারের সময় বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অন্তত ৬ কেজি আইস ও ২১ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করে। এ ছাড়া চলতি ২০২২ সালের প্রথম চার (জানুয়ারি-এপ্রিল) মাসে মিয়ানমার থেকে পাচারের সময় আরও প্রায় ১ কোটি ইয়াবা এবং ৫০ কেজির বেশি আইস উদ্ধার করা হয়েছে।

এর মধ্যে বিজিবি একাই উদ্ধার করে ৪২ কেজি আইস। অন্যদিকে পুরো ২০২১ সালে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে উদ্ধার হয়েছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ ইয়াবা ও ২৩ কেজি ৮০২ গ্রাম আইস।

আরও খবর

Sponsered content