ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে এবার প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন

  প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ , ১২:৫৬:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি।।সুপারির সাম্রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুরে এবার প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন কিছুটা কম হলেও দাম বেশি।লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হওয়ায় সুপারি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।ফলে বাড়ছে সুপারির বাগানও।তবে সুপারি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপিত হলে এবং সুপারিভিত্তিক কলকারখানা গড়ে উঠলে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন সম্ভব বলে চাষিদের দাবি।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে,লক্ষ্মীপুরে এবার ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৫ টন সুপারি।এই সুপারির বাজারমূল্য প্রায় ৪৯১ কোটি টাকা।

চাষিরা জানান,লক্ষ্মীপুরের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।সুপারি বেচাকেনায় বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন শতাধিক হাট বসছে।জেলা সদরের দালাল বাজারে সবচেয়ে বড় হাট বসে।সপ্তাহের দু’দিন বেচাকেনা চলে এই বাজারে।এখানে প্রতি বাজারে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়।

স্থানীয়রা জানান,এককেজি সুপারির দাম ৩৪০ টাকা,প্রতি মণের দাম ১৩ হাজার ৬০০ টাকা।সে হিসাবে প্রতি টন সুপারির দাম ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে উৎপাদিত ১৩ হাজার ৬৫৫ টন সুপারির বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর,রামগঞ্জ,কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় সুপারির উৎপাদন ভালো হয়েছে।এবার বাজারমূল্য প্রায় দ্বিগুণ।স্থানীয় হিসাবে,প্রতি পোন বা ৮০টি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।গত বছর ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম,ময়মনসিংহ,রাজশাহী,রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।রপ্তানি হয় বিদেশেও।

জানা যায়,সুপারি গাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ৩৫ থেকে ৪০ বছর ফলন পাওয়া যায়। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় বেশি আয় করা যায় সুপারিতে।সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগবালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।

সংশ্নিষ্টরা জানান,বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে।সুপারি পুরোপুরি পরিপকস্ফ হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।মূলত কার্তিক মাস আর অগ্রহায়ণ মাসই সুপারির ভরা মৌসুম।তবে এবার সময়ের আগেই বাজারে আসে সুপারি। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে বাজারে সুপারি আসতে শুরু করে।অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সুপারির হাটগুলো জমজমাট থাকে।চাষিরা বলছেন,বাজারে একটি চক্র রয়েছে। তারা সুপারির দাম কম দেখিয়ে নিজেরা কিনে নেয়।ফলে যে দাম পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না এখানের চাষিরা।

কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী জামাল মোল্লাহ জানান,ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারি স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।স্থানীয় হিসাব মতে,৬৪ কুড়ি সুপারি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এই দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। এবার সুপারির বাজারমূল্য অনেক বেশি বলে জানান তিনি।

এদিকে সুপারি চাষ লাভজনক হওয়ায় সুপারিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন।তিনি বলেন,সুপারি থেকে কোনো কিছু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।তবে আমাদের এখানেই সুপারিকেন্দ্রিক কিছু কুটিরশিল্প ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে।’

তিনি জানান,জেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে।যা গত বছরের তুলনায় ২০০ হেক্টর বেশি।লক্ষ্মীপুরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সুপারি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার।সুপারির উৎপাদন আরও বাড়াতে কৃষকদের বছরে অন্তত দু’বার বাগানে সার প্রয়োগ ও বাগান পরিচর্যার পরামর্শ দেন তিনি।

আরও খবর

Sponsered content