ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

রোগ জীবাণুর সংক্রমণসহ নানা কারণে ডিম-মুরগির উৎপাদন ও দামের তারতম্যে অনেক খামারি ঝরে গেছে

  প্রতিনিধি ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৩:৫১:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি,চাহিদা কমে যাওয়া ও রোগ জীবাণুর সংক্রমণসহ নানা কারণে ডিম-মুরগির উৎপাদন ও দামের তারতম্যে অনেক খামারি এরমধ্যেই ঝরে গেছে।তাই সমালোচনা না করে পোল্ট্রি শিল্পের পুণর্গঠন ও খামারিদের উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমান।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ওয়াপসা-বিবি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি বলেন,ডিম-মুরগির উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা,সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করা এবং নিরাপদ ডিম ও মুরগি উৎপাদনের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্যই এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।এবারের স্লোগান ‘টেস্টি এন্ড হেলদি প্রোটিন ফর অল’।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে জানিয়ে সভাপতি আরও বলেন, এতে বেড়েছে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচও।এ খরচ কমিয়ে আনতে বিকল্প কাঁচামালের ব্যবহার করে সাশ্রয়ীমূল্যে সবার জন্য প্রাণিজ আমিষের যোগান নিশ্চিত করাই এ সেমিনারের মূল আলোচ্য বিষয়।

ব্রয়লার মুরগির মাংস ভোক্তাদের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে হলে স্বাদের দিকে নজর দিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন,পোল্ট্রিতে প্রচুর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ভোক্তাদের বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে।তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক,প্রোবায়োটিক ও এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়।তাই ভোক্তারা চাইলেই এন্টিবায়োটিক রেসিডিউমুক্ত ডিম ও মাংস গ্যারান্টি সহকারেই বাজার থেকে কিনতে পারেন।

মসিউর বলেন,বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প অনেক এগিয়েছে।প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বর্জ্য রিসাইক্লিং করে বায়োগ্যাস,জৈবসার এমনকি বিদ্যুৎও উৎপাদন করছে।এছাড়া পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ফুড চেইনগুলোও এখন দেশের খামার থেকে ডিম ও মুরগির মাংস কিনছে বলে জানান তিনি।

সভায় ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন,গত একবছরে একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চার দাম তলানিতে ছিল।তাই প্রকৃত চাহিদার হিসাব বের করতে হবে ও সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে হবে।তা না হলে মুরগির দাম উঠানামা করবে।এতে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই ক্ষতির শিকার হবেন।

ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন,ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখায় গবেষণাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।এজন্য এখন থেকে প্রতি বছর ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী-গবেষকদের গবেষণায় সহায়তা করার জন্য প্রত্যেককে ১ লাখ টাকার বৃত্তি দেয়া হবে।

আর ওয়াপসা হেডকোয়ার্টার্সের প্রেসিডেন্ট মিজ মিশেল বায়োচার্ড এক ভিডিও বার্তায় বলেন,পোল্ট্রি’র জেনেটিক্সের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।স্বল্প পরিসরে ডিম-মাংসের উৎপাদন ও মান বাড়াতে হবে।এছাড়া বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির সংস্থান করতে হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে পোল্ট্রি শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে বলে জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী।তিনি বলেন,দেশের খামারি ও উৎপাদকদের সুবিধা দিতে বিশ্বের আধুনিক গবেষণা ও বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতাগুলো একত্রিত করতে হবে।

এছাড়া বাকৃবি অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন,পোল্ট্রি একটি লাইভ ইন্ডাষ্ট্রি।প্রতিনিয়তই এর উন্নয়ন হচ্ছে।আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন রোগ-জীবাণুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।তাই জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করা,খামারকে সুরক্ষিত রাখা এবং উৎপাদন ও পণ্যের মান বাড়াতে বিজ্ঞানীদের সর্বদাই সচেষ্ট থাকার আহবান জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content