সারাদেশ

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯ মাসে আটবার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে

  প্রতিনিধি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:৩৩:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি।।রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর।কিন্তু যাত্রার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে আটবার বন্ধ হয়েছে এটির উৎপাদন।সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

তিন দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার ফের উৎপাদনে ফিরলেও সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।আবারও যেকোনো সময় এটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

উৎপাদন বন্ধের পর প্রতিবারই সংশ্লিষ্টরা জ্বালানি সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে আসছেন।তবে ভেতরগত খবর হলো,বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার শুরুতেই তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে।কিন্তু সংশ্লিষ্টরা যথাসময়ে তাতে গুরুত্ব না দেয়ায় এই সমস্যা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দায়ত্বশীল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু না হওয়া পর্যন্ত যান্ত্রিক ত্রুটির এই সমস্যার সমাধান হবে না।দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে তখন প্রথম ইউনিটটি বন্ধ রেখে সময় নিয়ে যান্ত্রিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান,বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ছাই নির্গমন প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন।যান্ত্রিক এই সমস্যাটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে শুরু থেকেই ছিল।

এ বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের যন্ত্রপাতি ঠিকমতো কাজ করছে না।তবে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের সময় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর পর প্রথম ইউনিটটি পুরোপুরি বন্ধ করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেন তারা। তার পর দুই ইউনিট থেকেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কারিগরি ত্রুটিতে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বার বার বন্ধ হওয়াকে মোটেও স্বাভাবিক মনে করছেন না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের আওতায় ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটির উদ্বোধন করা হয়।তবে ইউনিটটি চূড়ান্ত উৎপাদনে যায় ডিসেম্বরে।

প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ৮০ লাখ টন কয়লা কেনার সিদ্ধান্ত হয়।যদিও ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানি করে কেন্দ্রটিতে সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।ফলে জ্বালানি সংকটে উৎপাদন শুরুর ২৯ দিনের মাথায় প্রথমবার বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন।এর পর থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় ফের উৎপাদনে ফেরে কেন্দ্রটি।তবে একই কারণে গত ১৫ এপ্রিল আবার বন্ধ হয় কেন্দ্রটির উৎপাদন।তিনদিনের ব্যবধানে পুনরায় চালু করা হলেও কয়লার অভাবে আবারও ২৩ এপ্রিল বন্ধ হয় কেন্দ্রটি।এবারও ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি না করতে পারার কারণ দেখানো হয়।

২৪ দিন বন্ধ থেকে ১৬ মে রাতে কেন্দ্রটিতে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।তবে ৩০ জুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটে ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ইউনিট প্রোটেকশনে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে আবার বন্ধ থাকে উৎপাদন।এর দশ দিন পর ত্রুটি সারিয়ে আবার শুরু হয় উৎপাদন।কিন্তু তিন দিন যেতে না যেতেই দেখা দেয় কারিগরি ত্রুটি।ফলে ১৩ জুলাই ৯ ঘণ্টার জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকে।

এর তিন দিন পর টারবাইনে (বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘূর্ণায়মান যন্ত্র) ত্রুটির কারণে ১৬ই জুলাই থেকে ফের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।মেরামত শেষে চার দিন পর আবারও উৎপাদনে ফিরলেও তার দশ দিন পর,অর্থাৎ ৩০ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট।

এর পর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাওয়া গেলেও সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ হলো কেন্দ্রটি।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পিডিবি ও ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) ৫০ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে কাজ করে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল)।কেন্দ্রটি নির্মাণে এক শতাংশ সুদে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। বাকি এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা করে ইকুইটি বিনিয়োগ করেছে পিডিবি ও এনটিপিসি।

আরও খবর

Sponsered content