শিক্ষা

মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফারিহা এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন

  প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২৩ , ২:০৭:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী প্রতিনিধি।।চার বছর আগেই বাবা-মা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।তারা ভেবেছিলেন,তাদের মেয়ে ফারিহা আফরিন হয়তো আর বাঁচবে না।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে একমাস ভেন্টিলেশনে থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন আফরিন।ছোট থেকেই তিনি শ্বাসকষ্টের রোগী।তখন থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবেন।এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে মাকে সঙ্গে করে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন চার বছর আগে তাকে সুস্থ করে তোলা সেই আইসিইউয়ের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালের কাছে।মিষ্টি পেয়ে হতবাক তিনি। প্রথমে বুঝতে পারেননি।পরে জানতে পারেন,চার বছর আগে মেয়েটি টানা এক মাস আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এজন্য মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েই ছুটে এসেছেন আইসিইউতে।

ফারিহা আফরিনের বাড়ি রাজশাহী নগরের বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকায়।তারা দুই ভাই-বোন। বড় ভাই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। মা লায়লা আঞ্জুমান একটি কলেজের প্রদর্শক।বাবা মো. আনোয়ার হোসেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক।

ফারিহা আফরিন বলেন,আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম তখন আমার একটি হাত প্যারালাইজড হয়ে যায়।লিখতে পারছিলাম না।আমার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতো।একদিন পরীক্ষা দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলো।এরপর আমাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলো।ওই চিকিৎসক আমাকে আইসিইউতে ভর্তির সুপারিশ করলেন।কিন্তু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউয়ের শয্যা ফাঁকা না থাকায় আমাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হলো।আমি তখন মৃত মানুষের মতো হয়ে গিয়েছিলাম,চোখের পাতা পর্যন্ত নাড়াতে পারতাম না।একদিন পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যা পাওয়া গেলো। আমি সেখানে টানা এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম।পুরো সময় আমাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হলো।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে আমাকে বাসায় আনা হলো।তারপর প্রায় দুই মাস আমাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। ২০২০ সালে পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২২ সালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিই।এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।

ফারিহা আফরিন আরও বলেন,ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে,আমি আইসিইউতে এক মাস মৃত মানুষের মতো ছিলাম,সেখানকার চিকিৎসকের জন্যই আজ আমি এতদূর পড়াশোনা করতে পেরেছি।আজ আমি বেঁচে আছি শুধুমাত্র আইসিইউয়ের ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যারের জন্য।তার জন্যই আমি চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।স্যারের অবদানের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। সেজন্যই সবার আগে মাকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম তার কাছে।তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন।আমাকে বলেছেন,ভালো করে পড়াশোনা করতে। আমিও চাই তার মতো একজন ভালো ডাক্তার হতে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউয়ের ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আমি তো মিষ্টি পেয়ে হতবাক।প্রথমে বুঝতে পারিনি কেন মিষ্টি নিয়ে আসা।পরে জানতে পারলাম,চার বছর আগে মেয়েটি টানা এক মাস আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল।

তিনি বলেন,সব রোগীর আমরা একইরকম যত্ন নেই।কিন্তু এ মেয়েটি আমাকে মনে রেখেছে,এজন্য ভালো লাগছে।আমি তাকে বলেছি, একজন ভালো ডাক্তার হতে।

আরও খবর

Sponsered content