জাতীয়

ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই-প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১১:৪৩:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২৭ সেপ্টেম্বর ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর ঘোষণা আসে ২২ সেপ্টেম্বর।বাংলাদেশে অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়,বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি।এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,আমার এটাই প্রশ্ন যে হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে?আর মানবাধিকার বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে,তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ,আমরাই তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য।অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়,তার জন্য যত রকমের সংস্কার,সেটা আমরাই তো করেছি—আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা,স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘“আমার ভোট আমি দেব,যাকে খুশি তাকে দেব”—এ স্লোগান তো আমার দেওয়া।আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি।আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিক্টেটর (সামরিক স্বৈরাচার) দেশ শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে।এরই প্রতিবাদে আমরা আমাদের আন্দোলন–সংগ্রাম করে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি।এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কাজেই সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ধরনের কোনো স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।’

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী,আমাদের দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা,সেটা র‍্যাব হোক, ষপুলিশ বা যেটাই হোক,কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে, আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়।এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না।অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে।কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে।যেখানে এমন বিচার হচ্ছে,এ ধরনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে,জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন—প্রতিটি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে,কিন্তু বাস্তবতাটা কী,বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন।কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে উদাহরণ তুলে ধরে বলেন,১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন।তিনি কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেননি। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে পড়ে পদত্যাগ বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে তিনি যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেন…এরপর ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল।কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।কাজেই একটা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে—এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি।তো আজ এখন তারা স্যাংশন দিচ্ছে,আরও দেবে,দিতে পারে।এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার,তাদের ভাতের অধিকার,তাদের বেঁচে থাকার অধিকার,তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।’

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল,বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।তাঁর কথা,এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব,সেটাও কিন্তু কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও তারা ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন,আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ,ওয়াই–ফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ,রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে।আমাদের বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা,ভোকেশনাল ট্রেনিং; আমরা এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া…। তো ঠিক আছে,স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না,আসবে না।না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি,কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জারি।’

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares