ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

বাংলাদেশে খাদ্য রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে-রাশিয়া

  প্রতিনিধি ২১ জুলাই ২০২৩ , ১:৪২:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে রাশিয়া।এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়েছে মস্কো। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবের চিঠি দিয়েছে ঢাকার রুশ দূতাবাস।ওই চিঠিতে লাল ও হলুদ মসুরের ডাল,সয়াবিন তেল,হলুদ,বাদাম রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো।মস্কোর এই প্রস্তাব নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো।এর প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছে।এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার জবাবে বিকল্প বাজার খোঁজার চেষ্টায় আছে মস্কো।এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় খাদ্য রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া দূতাবাস।

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ দেখিয়ে রুশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়,জিটুজি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে চায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি প্রদিনটর্গ। সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও সমন্বিত মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহের আগ্রহ দেখিয়েছে তারা।এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে,রাশিয়ার প্রস্তাবনাটি পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাজ চলছে।প্রয়োজনে অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে,প্রদিনটর্গ হলো রাশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, যা জিটুজির ভিত্তিতে খাদ্যশস্য রপ্তানি করে থাকে।২০১৩ সাল থেকে কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সার এবং খাদ্যশস্য রপ্তানি করে আসছে।

তবে রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মস্কোর ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন,রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহের বিষয়ে একটা প্রস্তাব এসেছে।আমরা ওই প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করছি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে,দেশে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে কাজ চলছে। সূত্র জানিয়েছে,রাশিয়া থেকে গম আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে,পাঁচ বছর আগে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ৪৩ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবার উভয় দেশের বাণিজ্য শতকোটি ডলার পেরিয়ে দাঁড়ায় ১১১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এর পর থেকে প্রতিবছরই এ বাণিজ্য শতকোটি ডলারের বেশি থাকছে।

ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য খুব বড় নয়।পাঁচ বছর ধরে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকছে।২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ইউক্রেনে রপ্তানি দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে, তবে পরিমাণে খুবই কম।

ইউক্রেনে রপ্তানির তুলনায় দেশটি থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।২০২০-২১ অর্থবছরে ইউক্রেনে রপ্তানির চেয়ে সেখান থেকে আমদানি হয়েছে ১৩ গুণ বেশি পণ্য।তার আগের অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে ২০ গুণ বেশি পণ্য আমদানি হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে,রাশিয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি করে বস্ত্রপণ্য, চিংড়ি, পাট সুতা,চামড়া,মোটরপার্টস,হোম টেক্সটাইল,টেরিটাওয়েল, ফুটওয়্যার,সিনথেটিক দড়ি, টেবিলওয়্যার ইত্যাদি।আর রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে গম,সার,লোহা,রাসায়নিক পণ্য,প্লাস্টিক,ইস্পাত ইত্যাদি।

এদিকে,ইউক্রেনে খুব বেশি রপ্তানি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ।রপ্তানি হচ্ছে চিংড়ি,ওভেন পোশাক,নিট পোশাক, টেক্সটাইল,তামাক,ওষুধ ইত্যাদি।তা-ও নিয়মিতভাবে রপ্তানি হয় না।আর আমদানি করা হয় খাদ্যপণ্য,লোহা,ইস্পাত,জাহাজ, নৌকা ও নৌকার কাঠামো,এয়ারক্রাফট,স্পেসক্রাফট,যন্ত্রাংশ ইত্যাদি।

আরও খবর

Sponsered content