ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

জিপসাম বোর্ডের কারণে অগ্নিকাণ্ড-নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম

  প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৩ , ৮:৩৩:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে জিপসাম বোর্ডের কারণে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন।শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে তিনি এ কথা জানান।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন,যে মার্কেটের তিনতলায় আগুন লেগেছে সেটি সেন্ট্রালি এসি করা।এতে ডার্ক সিস্টেম করে জিপসাম বোর্ড দিতে হয়েছে।আমার ধারণা, আগুন যেখানে লাগুক না কেন,জিপসাম বোর্ডের কারণে দ্রুত পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন,আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের দল নিউমার্কেট এলাকায় চলে আসে।আমাদের মার্কেটের যে আগুন নেভানো যন্ত্রগুলো ছিল সেগুলো নিয়ে চেষ্টা করা হয়,পাশাপাশি নিউমার্কেটের যে মসজিদ সেখানে বড় একটি রিজার্ভ ট্যাংক আছে,এখনও সেই পানি দিয়ে কাজ চলছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন,ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটটি আমাদের নিউমার্কেট একদম লাগোয়া,ফলে তাদের মতো আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে আগুন কোন দিকে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ করে রোজার শেষ দশ দিনে সবচেয়ে ভালো বেচা-কেনা হয়ে থাকে।অন্য সময় কোনো ব্যবসায়ীর কাছে যদি এক টাকা থাকে,এই সময় এসেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা লোন করে থাকেন। তারা রোজার ঈদকে টার্গেট করে ব্যবসা করে থাকেন।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন,অন্য সময়ে কোন ব্যবসায়ীর যদি দিনে দুই থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়,এই সময়ে বেচাকেনা হয় কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত।আর ব্যবসায়ীরা এই সময়ে খুব কমই টাকা বাসায় নিয়ে থাকেন৷কারণ দোকান বন্ধ করতে করতে রাত ১২টা-১টা বেজে যায়।ওই সময় কেউ ঝুঁকি নিয়ে সারাদিনের বেচা-কেনা লাখ টাকা বাসায় নিয়ে যেতে চান না। ফলে আমরা ধারণা করছি টাকা ভেতরে অর্থাৎ দোকানের ক্যাশ বক্সে ছিল।

তিনি বলেন,ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ ক্ষতি হলো এই ক্ষতি পুষিয়া নেয়ার মতো অবস্থা নেই।ঈদের আগে কোন ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।গতকাল রাতে যে হাসিমুখে বাড়ি গেছে আজকে সকালে এসে ফুটপাতে বসে কাঁদছে। ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ।আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে ছেলের প্যান্ট ও শার্টের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা পারভীন।তিনি বলেন, ‘পোলার শেষ সম্বলটা চইলা গেল।ফকির হইয়া গেলাম।’

ব্রিজের সঙ্গে তার ছেলের প্যান্ট ও শার্টের দোকান ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ।এখন ছেলেকেও খুঁজে পাচ্ছেন না মা৷ সব হারিয়ে নিঃস্ব পারভীন।

পারভীন বলেন,বাবারে কখন যে আগুন লাগল কইতেই পারি না।সেহরি শেষ কইরা ঘুমাইতে যামু।তখন পোলায় কইল মা আগুন লাগছে দোকানে।ওমনি ছুটে চলে গেল।আমি পিছে পিছে আইলাম।আইয়া দেখি সব শেষ।ভিত্রে (ভেতরে) যা ছিল সব পুড়ে গেছে।ফকির হইয়া গেলাম তো বাবা। ’

‘আগুন লাগার পর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেও কিছু পাইলাম না।ছেলেটাও কই গেল পাইতাছি না।বাবারে আমার এখন কী হবে?আমারে পোলারে একটু খুঁইজা দেন কেউ।’ বলেন মা পারভীন।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার ফাইটাররা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিচ্ছে র‍্যাব।অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় ধোয়ায় অসুস্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যসহ ২২ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content