রাজনীতি

বরিশালে নৌকাকে তুলাধোনা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

  প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১:২৩:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।গণসংযোগের সময় দলীয় প্রতীক নৌকাকে তুলাধোনা করছেন বরিশালের বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।কেবল নৌকা নয়, দলীয় প্রার্থী এমনকি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়েও উলটাপালটা বলছেন তারা।এই নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের কর্মী-সমর্থকরা।আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নৌকা তথা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন বিরোধী বক্তব্য মানতে পারছেন না তারা।এদিকে প্রচার জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষও বাড়ছে নৌকা-স্বতন্ত্রের।ও

বরিশাল-৫ (সদর), পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) এবং পিরোজপুর-১ (সদর-ইন্দুরকানী-নাজিরপুর) আসনে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হামলা সংঘর্ষের ঘটনা। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১ নির্বাচনি এলাকার ১১টিতেই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।এর মধ্যে সাতটিতে নৌকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা।

পটুয়াখালী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান।শুরু থেকেই নৌকার বিরুদ্ধে দলকে ব্যবহারের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।নৌকার প্রার্থী মুহিব্বুর রহমান এমপি এই অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার মাহবুবের ঈগল প্রতীকের পক্ষে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার উদ্দিন মোল্লা।নৌকায় ভোট দিলে হাত কেটে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

তার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হলে তোলপাড় ওঠে পুরো নির্বাচনি এলাকায়।কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল হাওলাদার বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে কথা বলায় মাহবুবকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা লোকজন নৌকার বিরুদ্ধে বলবে সেটাই তো স্বাভাবিক।’

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে বলার ধৃষ্টতা সে পেল কোথায়?সে নিজেও নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছে।আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনসার মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আমি নৌকা সম্পর্কে খারাপ কিছু বলিনি। এখানে নৌকার যে প্রার্থী তার কথা বলেছি।’

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাফিজ মল্লিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলেছেন।তার মানে স্বতন্ত্ররা নৌকার বিরুদ্ধে অশালীন কথা বলবে বা আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করবে-এমন নির্দেশনা তার নেই।এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু প্রার্থী হয়েছেন।স্বতন্ত্র মানে স্বতন্ত্র, তার তো কোনো দল থাকার কথা নয়,অথচ তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অফিস,দলের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করছেন তার নির্বাচনি প্রচারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার এক প্রচার কর্মীর ওপর হামলা চালায় তার লোকজন।আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়ে তিনি কি করে নৌকার বিরুদ্ধে বলছেন?’

অভিযোগ সম্পর্কে শামসুল আলম বলেন, ‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে তিনি (হাফিজ) উলটাপালটা বলছেন। আমরা যারা স্বতন্ত্র তারা জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার প্রার্থী।তিনি আমাদের নির্বাচন করার জন্য বলেছেন।নেতাকর্মীরা যাকে ভালোবাসে তার সঙ্গে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সালাহউদ্দিন রিপন।উঠোন বৈঠক-গণসংযোগে তিনিও নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলছেন।শুধু তাই নয়, প্রশ্ন তুলছেন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। বৃহস্পতিবার এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কেউ নৌকায় ভোট দেবেন না।নৌকা গত পাঁচ বছরে বরিশালে কোনো উন্নয়ন করেনি।’

নৌকার প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনি এমপি ছিলেন,মন্ত্রী ছিলেন,বরিশালের জন্য কী করেছেন?’

এ সম্পর্কে নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘জাহিদ ফারুক কোনো উন্নয়ন করেছেন কি করেননি তার প্রমাণ হবে ব্যালটে। ভোটে জেতার আশায় কে কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না।’

এখানে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতাও ঘটছে। আর তা ঘটছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে উচ্চ আদালতে থাকা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নৌকার সমর্থকদের মধ্যে।

নির্বাচন প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা চলছে পিরোজপুর-১ নির্বাচনি এলাকায়। সেখানে নৌকার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঈগল নিয়ে মাঠে আছেন সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএমএ আউয়াল।

কেবল দল নয়,নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সহোদর দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীদের নির্বাচনে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে আউয়ালের বিরুদ্ধে। দলের জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় নৌকার প্রার্থীকে বেশ চাপে রেখেছেন এই নেতা।সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে হামলা সংঘর্ষের ঘটনা।

এরকম অন্তত ছয়টি ঘটনায় এখন পর্যন্ত আউয়াল সমর্থক লালন ফকির নামে একজন নিহত হওয়াসহ আহত হয়েছে ২০ জন।এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন মন্ত্রী রেজাউল। অভিযোগে আউয়ালের বিরুদ্ধে নৌকার ভোটারদের হুমকি, মারধরসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন তিনি।

রেজাউল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে এমপি হওয়াই কেবল নয়, সবরকম সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি (আউয়াল) এখন নৌকা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করছেন।নৌকার লোকজনের ওপর হামলা করাচ্ছেন।’

এ ব্যাপারে আউয়াল বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে কোথাও একটা শব্দ বলেছি, প্রমাণ করতে পারলে নির্বাচন থেকে সরে যাব।পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এসব মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।আমি মনে করি, সবার উচিত গণরায়ের জন্য অপেক্ষা করা।’

আরও খবর

Sponsered content