সারাদেশ

বরিশালে তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে ৩০জন অগ্নিদগ্ধ হাসপাতালে ভর্তি

  প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:১৪:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল প্রতিনিধি।।তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে বরিশাল বিভাগের কোনো না কোনো এলাকায় দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও তত বাড়ছে।কিন্তু দগ্ধ রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।আট বছর আগে হাসপাতালটিতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু হলেও তার উন্নতি হয়নি।ক্রমান্বয়ে অবহেলা, লোকবল সংকট আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নামেই বার্ন ইউনিটে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দগ্ধ ১৪ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে।গড়ে একজন করে রোগী আসছেন হাসপাতালে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শীতের থেকে ঊষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে অথবা গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগী।আর দগ্ধ রোগীদের মধ্যে বয়স্ক এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি।যতজন এসেছেন তার অধিকাংশকে বরিশালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স লিংকন দত্ত জানান, শীতের এই সময়টাতে আগুনে পোড়া রোগীর চাপ কিছুটা বেশি থাকে। গুরুতর দগ্ধ রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। তবে সেটা সার্জারি বিভাগ থেকে প্রেরণ করা হয়। যে কারণে ঢাকায় রেফার্ড হওয়া রোগীর সঠিক হিসেব নেই বার্ন ইউনিটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে,নির্ধারিত ৩০ শয্যায় ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।এদের মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২০ জন রোগী ছিল আগুনে পোড়া।যাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।

জানা গেছে,২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের মূল ভবনের পাশে হৃদরোগ ভবনের নিচতলায় ৮টি শয্যা নিয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু হয়। বর্তমানে শয্যা সংখ্যা ৩০টি।নির্ধারিত ৮টি শয্যার বাইরে বাকি শয্যাগুলো রোগীদের প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বার্ন ইউনিট স্থাপনকালে ৮ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্সের পদ রাখা হয়।শুরুতে ইউনিটটি পরিচালনার দায়িত্ব পান সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বছরখানেক পর তিনি অবসরে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেনকে এখানে পদায়ন করা হয়।কিন্তু তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।পরে জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ এ কে এম আজাদকে বার্ন ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকের লিফটের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।ওই বছরের ১৫ মে চিকিৎসক শূন্যতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি।তবে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে পড়ে সাতজন চিকিৎসককে এই হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকার ২০ মাস পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে একই স্থানে পুনরায় চালু করা হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি।কিন্তু চালু হওয়ার গত দুই বছরেও সংকট কাটেনি ইউনিটটিতে। বরং সংকট ক্রমশ বাড়ছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান,অধ্যাপকের পদ শূন্য।সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদের মধ্যে আমি একাই আছি।তাছাড়া সহকারী অধ্যাপক দুজন থাকলেও মিডলেভেল চিকিৎসকের সকল পদই শূন্য।রেজিস্ট্রার-সহকারী রেজিস্ট্রারের ৫টি পদই শূন্য।নেই মেডিকেল অফিসার। ১৪ জন স্টাফ নার্স রোটেশন অনুযায়ী কাজ করলেও এদের মধ্যে একমাত্র যিনি ইনচার্জের দায়িত্ব আছেন তিনিই সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফলে রোগীদের সেবা দেওয়াটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন,বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাটা জরুরি।কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির কর্মসূচির সংকটের কারণে সেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।তাছাড়া যেই ভবনটিতে বার্নের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেই জায়গাটাও উপযুক্ত নয়।ভবনের অবস্থান ভালো না,রোগীদের অস্ত্রপচারের জায়গা নেই,ড্রেসিং রুম একটি থাকলেও তার অবস্থা বেহাল।

ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন,যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না।এই ভবনের প্রধান গেটটি বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।এ কারণে দীর্ঘ পথ ঘুরে এখানে আসতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গেটটি খুলে দেওয়ার জন্য বহুবার বলেছি।কিন্তু মালামাল চুরি হওয়ার অজুহাতে তিনি গেটটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন না।তাই এই মুহূর্তে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগটি স্থানান্তরের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবলের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন,গোটা হাসপাতালেই জায়গা সংকট।যে কারণে প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ইউনিটটি স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন,স্বতন্ত্র বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।এজন্য হাসপাতালের বর্তমান মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিক অথবা পুরাতন ভবনের পশ্চিম পাশের পুকুর পাড়ে সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।চলতি বছরেই ১৫ তলা ভবনের কাজ শুরু হবে।এর মধ্যে পাঁচতলা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং বাকি তলাগুলো অন্যান্য বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content