শিক্ষা

প্রকৌশল গুচ্ছে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি রাফি

  প্রতিনিধি ২৭ জুলাই ২০২৩ , ৫:১১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রাবি প্রতিনিধি।।প্রকৌশল গুচ্ছে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি রাফি।মনে প্রাণে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল রাফির। দিন-রাত পরিশ্রম করে সেই স্বপ্নকে বাস্তবতায় এনে চান্স পেয়েছিলেন প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি তিনি।

ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীর নাম মাহবুব হাসান রাফি।তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট),খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ২৭৫২তম মেধাস্থান অর্জন করেন।

ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,গত ২৩ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভর্তি হওয়ার জন্য সকল প্রকার কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল।কিন্তু ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০-২৩ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।ফলে ভর্তির তারিখ সম্পর্কে খেয়াল ছিল না অসুস্থ রাফির।

২৩ জুলাই রাতে তার এক বন্ধু ভর্তি হওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।কারণ সে যে কাগজপত্র জমা দিতে পারেনি। স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরতে ২৪ জুলাই সকালেই একটি আবেদনপত্র নিয়ে রুয়েটে হাজির হন রাফি।ছলছল চোখে প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সভাপতি বরাবর আবেদনপত্রটি দেন।কিন্তু ‘তুমি আর ভর্তি হতে পারবে না’ বলে জানিয়ে দেন কমিটির সদস্য সচিব।সঙ্গে জানিয়ে দেন কমিটির ১২ জন সদস্য যদি তাকে বিশেষ বিবেচনা করেন তাহলে ভর্তি হতে পারবেন।

রাফির বাসা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার অন্তর্গত মহেড়া ইউনিয়নের আদাবাড়ি চড়পাড়া এলাকায়।তার পিতার নাম আব্দুর রউফ সরকার।তিনি নারায়ণগঞ্জে যমুনা গ্রুপে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন।মাতা ফাতেমা বেগম একজন গৃহিণী।তিন ভাই-বোনের মধ্যে রাফি সবার ছোট। বড় ভাই আব্দুর নূর তুষার বুয়েটে পড়াশোনা করছেন।পরিবারের ইচ্ছে মেডিক্যাল হলেও মেধাবী রাফির ছোট বেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে ছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন এই শিক্ষার্থী।তার পরিবারের ভাষ্য,সে সবসময় কান্নাকাটি করছে। ঠিকঠাক খাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাফি বলেন,আমার বাবা মার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানানো।কিন্তু আমি ছোট থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পোষণ করতাম।ফলে বাবা-মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রচণ্ড আবেগের কারণে আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রস্তুতি নেই।ভর্তি পরীক্ষায় ২৭৫২তম মেধাস্থান করি।কিন্তু ডেঙ্গু ও ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে আমি ৪দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।ফলে ভর্তির তারিখটা আমার মনে ছিল না।তাছাড়া ভর্তি হওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র একদিন।

তিনি আরো বলেন,এখন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আমার হাতে নাই।হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।এই সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।ভর্তি পরীক্ষা কমিটিতে থাকা স্যারদের কাছে আমি আবেদন করছি যাতে আমাকে ভর্তি হওয়ার সুযোগটা দেন।আমার স্বপ্ন নিয়ে আমি বাঁচতে চাই।

এ বিষয়ে কথা হয় রাফির মায়ের সাথে।তিনি বলেন,আমার ছেলেকে খুব কষ্ট করে আমরা লেখাপড়া শিখিয়েছি।আমাদের পরিবার স্বচ্ছলও না যে তাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবো। আমার ছেলে এখন সারাদিন হতাশায় থাকে।ঠিকঠাক কিছুই খায় না।সবসময় কান্নাকাটি করে।স্যারেরা যদি তাকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিতেন তাহলে খুবই ভালো হতো।তার এভাবে থাকাটা আমি মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার বলেন,ভর্তি হওয়ার জন্য আমরা একটা নোটিশ দিয়েছিলাম।ভর্তি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তিনি ওইদিন কাগজপত্র জমা দেননি এবং তার কী অবস্থা আমাদের কোনো কিছু জানাননি।কাগজপত্র জমা নেওয়ার পরদিনই সাবজেক্ট চয়েস ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ফলে তাকে ভর্তি করানো হলে অনেক শিক্ষার্থীর সাবজেক্ট পরিবর্তন হয়ে যাবে।ফলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করবে।

ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা খুবই সেনসিটিভ একটা বিষয়।এখানে তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারেরা ইচ্ছা করলেও তাকে ভর্তি করাতে পারবেন না।ভর্তি করাতে হলে প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রীয় কমিটির সুপারিশ লাগবে।কিন্তু কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন যে,কেবল তারাই ভর্তি হতে পারবেন,যারা বিকেল পাঁচটার মধ্যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে পারবেন।নচেৎ কেউ ভর্তি হতে পারবেন না।কারণ তাকে ভর্তি করানো হলে সকল সিস্টেম গোলমাল হয়ে যাবে।

আরও খবর

Sponsered content