রাজনীতি

নিক্সন চৌধুরী বর্তমানে ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ কৃষি জমির মালিক!

  প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:২৩:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ফরিদপুর প্রতিনিধি।ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা,সদরপুর,চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী গত পাঁচ বছরে ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে ১০৬৪ শতাংশ জমির মালিক হয়েছেন। সবমিলিয়ে তিনি বর্তমানে ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ কৃষি জমির মালিক।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নিক্সন চৌধুরীর হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় নির্মাণাধীন দুই তলা ভবন বাবদ দেখানো হয় ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সম্পদ।এবার ওই ভবনের মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।পাশাপাশি নতুন করে একতলা অফিস রুম,মিটিং রুম,রান্নাঘর, ডরমিটরি,সিসি রাস্তা, সীমানা প্রাচীর ও পুকুর ঘাট খাতে ৩৪ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে।

এবারের হলফনামায় নিক্সনের ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষি জমির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ১৬০ টাকা।গত হলফনামায় ছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদ।পাঁচ বছরে বেড়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকার জমি।

গত হলফনামায় নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী ঢাকার বনানী ও গুলশানে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন।এবার ওই দুটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি গুলশানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের নতুন একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।

১০ বছর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে জয়ী হন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী।ওই সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার নামে কোনো জমি ছিল না।বর্তমানে সেই ভাঙ্গাতেই তিনি বসতি গড়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী কৃষি খাত,নীপা পরিবহন লিমিটেড,রিতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড,স্বাধীন বাংলা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিসিং স্টেশন,এন ডেইরি ফার্ম,এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজ ফার্মের সম্মানী বাবদ বার্ষিক আয় ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৫ টাকা দেখানো হয়েছে।গত পাঁচ বছরে এন ডেইরি ফার্ম,এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজ মালিক হয়েছেন তিনি।এ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তার বার্ষিক আয় ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৫ টাকা।

গত হলফনামা অনুযায়ী তিনি যেখানে নীপা পরিবহন লিমিটেড ও রীতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড থেকে বার্ষিক ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পেতেন পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ দুটি খাত থেকে আরও ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা পান।স্বাধীন বাংলা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিসিং স্টেশন থেকে পাঁচ বছর আগে আয় করতেন ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৬ টাকা,যা বর্তমানে বেড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫০ টাকা হয়েছে।

এই বছরের হলফনামায় কৃষিখাত থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।গতবার দেখানো হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার। এই পাঁচ বছরে তার কৃষি খাত থেকেই আয় বেড়েছে ৫ লাখ টাকা।

এদিকে,কৃষি ও ব্যবসায় তার প্রসার বাড়লেও ব্যাপকভাবে কমেছে ব্যাংক মুনাফা।পাঁচ বছর আগে এ খাত থেকে তার আয় ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৭ টাকা,আর চলতি বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৯০৩ টাকায়।

আয় কমেছে জাতীয় সংসদের প্রাপ্ত পারিতোষিক ও অন্যান্য খাতেও।পাঁচ বছর আগে এ খাত থেকে তার আয় ছিল ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৫ টাকায়।

তবে আয় বেড়েছে স্টক ব্যবসায়।পাঁচ বছর আগে ছিল ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা, বর্তমানে বেড়ে ১৯ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে।

অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ আয় বেড়েছে নিক্সনের নির্ভরশীলদের।পাঁচ বছর আগে নির্ভরশীলদের এ খাতে আয় ছিল ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭৪ টাকা,বর্তমানে তা বেড়ে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৭২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ব্যাপকহারে বেড়েছে নিক্সন চৌধুরীর নির্ভরশীলদের ব্যাংক মুনাফাও।পাঁচ বছর আগে এ খাতে নির্ভরশীলদের আয় ছিল ২১ হাজার ৬৮ টাকা,এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৮ টাকা।

গত হলফনামা অনুযায়ী নির্ভরশীলদের মাস্ট প্যাকেজিং লিমিটেড থেকে সম্মানী বাবদ ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার আয় দেখানো হয়,যা চলতি বছর কমে ২১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।গত হলফনামায় ইত্তেফাক পাবলিকেশন থেকে কোনো আয় দেখানো না হলেও এবার সেখান থেকে ছুটি ভাতা নামে চার লাখ টাকা আয় দেখানো হয়েছে।স্টক ব্যবসায় পাঁচ বছর আগে নিক্সন চৌধুরীর নির্ভরশীল কেউ যুক্ত না থাকলেও নতুন হলফনামা অনুযায়ী এই খাতে তার মেয়ের বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

নতুন হলফনামা অনুযায়ী অস্থাবর সম্পত্তি কমেছে নিক্সন চৌধুরীর।তবে নতুন এফডিআরে যুক্ত হয়েছেন তার স্ত্রী।পাঁচ বছর আগে নিক্সন চৌধুরীর নামে এফডিআর ছিল ৭০ লাখ টাকা,তবে এবার তার নামে কোনো এফডিআর নেই। গতবার স্ত্রীর নামে কোনো এফডিআর না থাকলেও এবার স্ত্রীর নামে ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫১ টাকার এফডিআর দেখানো হয়েছে।

গত হলফনামায় নিক্সনের নিজের নামে নগদ ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৭ টাকা থাকলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকায়।আর গতবার স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ৮৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা দেখানো হয়,তা এবার বেড়ে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গতবার নির্ভরশীলদের নামে কোনো নগদ টাকা না থাকলেও এবার নগদ ৭৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।ব্যাংকে জমা অর্থ গত হলফনামায় ছিল নিক্সনের নামে ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫৪ টাকা তা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকা।

এদিকে,প্রাইভেট কোম্পানি নীপা পরিবহন লিমিটেড ও রিতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডে বিনিয়োগ ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।স্বাধীন বাংলা ফিলিং স্টেশনে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ টাকার শেয়ার কমে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯১৭ টাকা হয়েছে।আর গতবার এন ডেইরি ফার্ম,এন ডাক ফার্ম এবং এন ফিশারিজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলেও এবার তিনি ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানে ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৫ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

গতবার তার স্টক ব্যবসায় কোনো বিনিয়োগ ছিল না।এবার তিনি স্টক ব্যবসায় ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।গত হলফনামা অনুযায়ী ৫৫ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি ছিল নিক্সন চৌধুরীর, আর এবার তার নামে ৯১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৬ টাকা মূল্যের একটি জিপগাড়ি দেখানো হয়েছে।আর নিক্সন চৌধুরীর ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী গতবারের তুলনায় বেড়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

গত হলফনামায় বন্দুক-পিস্তল দেখানো না হলেও এবার তার নামে এক লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের বন্দুক-পিস্তল দেখানো হয়েছে।এছাড়া এবার তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন একটি পিয়ানো কিনেছেন।গতবার নিক্সন চৌধুরীর লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিনিয়োগ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৫ টাকা,এবার এ খাতে কোনো টাকা দেখানো হয়নি।

উল্লেখ্য,ফরিদপুর-৪ আসনে সাতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।এর মধ্যে আয়কর বিবরণীর তথ্য না দেওয়ায় জাতীয় পার্টির মো. আনোয়ার হোসেনের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।এ আসনের বৈধ প্রার্থীরা হলেন- কাজী জাফরউল্ল্যাহ (আওয়ামী লীগ),মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী (স্বতন্ত্র),মাকসুদ আহমেদ (তরিকত ফেডারেশন), মো.রবিউল ইসলাম (জাকের পার্টি), মো. আলমগীর কবির (সুপ্রিম পার্টি) ও নাজমুন নাহার (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।

এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরউল্ল্যাহকে হারিয়ে দুইবার স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন চৌধুরী।

আরও খবর

Sponsered content