ইসলাম ও জীবন

নবীগণের প্রতি প্রদত্ত বিধান পৌঁছে দেওয়া ও মানবজাতির কাছে তা প্রচার-প্রসার করাই তাবলিগ

  প্রতিনিধি ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ , ২:১৯:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।প্রত্যেক নবীর সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তাবলিগ ও দাওয়াত।মহান প্রভু আল্লাহতায়ালা তাঁর কাছে যে মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা জাতির কাছে প্রচার করা, এর প্রতি তাদের আহ্বান করা সব নবীর অন্যতম কর্তব্য। মহানবী (সা.) এ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন। পরিপূর্ণ ও সুনিপুণভাবে সম্পাদন করে ইহকাল থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী (সা.) তাঁর লক্ষাধিক সাহাবাকে সম্বোধন করে তিনবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘ওহে!আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’প্রত্যেকবারই তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ! অবশ্যই। ’ (সহিহ বুখারি, হা. ৬৭৮৫)। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীগণের প্রতি প্রদত্ত বিধান পৌঁছে দেওয়া ও মানবজাতির কাছে তা প্রচার-প্রসার করাই তাবলিগ। তাবলিগ শব্দটি আরবি।

আরবি ভাষায় তাবলিগ শব্দের সমার্থবোধক আরও শব্দাবলি আছে। কোরআনুল কারিমে এমন কয়েকটি শব্দ উল্লেখ হয়েছে। তন্মধ্যে ‘ইনজার’ (সতর্ক করা)‘দাওয়াত’ (আহ্বান করা) এবং ‘তাজকির’ (স্মরণ করিয়ে দেওয়া বা উপদেশ করা)।উল্লিখিত যাবতীয় শব্দের মাধ্যমে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-কে কোরআনে কারিমে আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনীত ধর্ম বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন।

এ ধর্মে জাত, গোষ্ঠী ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। নেই ভৌগোলিক কোনো সীমারেখা।তাই বিশ্বনবীর (সা.) দাওয়াতি কার্যক্রম এবং তাবলিগের পরিমন্ডল ছিল বিশ্বব্যাপী। আর তিনি ছিলেন গোটা জাহানের জন্য রহমত ও বিশ্বনবী।
মহান প্রভু পর্যায়ক্রমে তাঁকে বিশ্বব্যাপী তাবলিগের নির্দেশনা প্রদান করেন।

সর্বপ্রথম আপনজনদের এ পথে আহ্বান করার নির্দেশ করে আল্লাহতায়ালা বলেন,আর আপনি নিকটতম পরিবার পরিজনকে সতর্ক করুন। ’ (সুরা শুয়ারা-২১৪)।
এক পর্যায়ে মহান আল্লাহতায়ালা এ ধর্মের প্রচার-প্রসার সমগ্র মানবজাতি পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা করেন,আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি;কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।(সুরা সাবা-২৮)।

অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন,হে রসুল,বলে দিন!হে মানবমন্ডলী।আমি তোমাদের সবার জন্য প্রেরিত রসুল।(সুরা আল আরাফ- ১৫৮)।

মহানবী (সা.) দেশ ও জাতি নির্বিশেষে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব অবিরাম ক্লান্তিহীনভাবে চালিয়ে যান। সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার ও দুর্ভেদ্য প্রতিকূলতা এড়িয়ে বিশ্বশান্তির এ বার্তা তিনি ছড়িয়ে দেন বিশ্বব্যাপী।

প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি হজ মৌসুমে আরবের বিভিন্ন গোত্রে গমন করে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দেন।ওই সময়েই তাঁর আহ্বান ইয়েমেন ও আবিসিনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়।মক্কাবাসী তাঁর দাওয়াতি কাজে বাধার পাহাড় গড়ে তোলে।সব বাঁধা উপেক্ষা করে তিনি তাঁর খোদা প্রদত্ত দাওয়াতি মিশনে মহান বিজয় লাভ করেন।তখন তিনি আরও পূর্ণোদ্যমে আরব অনারবে দাওয়াতি কাজে প্রতিনিধি এবং রাজা-বাদশাহদের প্রতি ইসলামের দাওয়াত সংবলিত চিঠিপত্র প্রেরণ করেন।

ফলে সত্যানুসন্ধিৎসু লোকজন ব্যাপকভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। মহান প্রভু বর্ণনা করেন,যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।(সুরা আন নাসর-১-২)।নবী রসুল আগমনের ধারা সমাপ্ত হয়েছে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনের মাধ্যমে।তবে ইসলাম ধর্মের এ চিরশান্তির পয়গাম কেয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে।চালু থাকবে এর অবিনশ্বর দাওয়াতি কার্যক্রম।

মহান প্রভু উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতিটি মানুষের ওপর অর্পণ করেছেন ইসলাম প্রচারের এ মহৎ কাজ।যা এ উম্মতের জন্য একটি অন্যতম মর্যাদার প্রতীক।আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন,তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে,তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ প্রদান করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে। (সুরা আলে ইমরান-১১০)।

আরও খবর

Sponsered content