অপরাধ-আইন-আদালত

দূর্নীতি অভিযোগে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন-সাবেক আইজিপি,বেনজীর আহমেদ

  প্রতিনিধি ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৪:০৫:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।অর্জিত সম্পদ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারলে প্রমাণদাতাকে সেই সম্পদ বিনামূল্যে দিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন তিনি।রেকর্ডেড ভিডিওটিতে এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত তুলে ধরেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় নিজের সম্পদ প্রসঙ্গে বেনজীর আহমেদ বলেন,আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি আছে, তার প্রত্যেকটির বিপরীতে অর্থের উৎস-সহ সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে উল্লেখ করা আছে।আমার পরিবার তাদের ব্যবসার জন্য এবং আমি নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করে সেরা করদাতার সম্মাননাও পেয়েছি।’

চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনে নিজের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,চাকরি জীবনে ব্যক্তিগতভাবে আমি ঘুষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।পুলিশ কমিশনার এবং র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাঠামোগত প্রশাসনিক এবং অপারেশনাল সংস্কার বা রিফর্মের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।জুনিয়র পদগুলোতে পদোন্নতিতে যে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল,সেখানেও পদোন্নতি বিধিমালা ব্যাপক সংস্কার করে দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি।আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি পুলিশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি,আমার অবসরের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং দুঃখজনক।’

ভিডিও বার্তায় ব্যাখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,যেহেতু আমি জনগণের করের টাকায় পরিচালিত স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি।এরপর প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে কর্তব্য পালন করেছি,সেহেতু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য তুলে ধরার একটি নৈতিক তাগিদ অনুভব করছি।’

চাকরিকালে ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কর্তৃক ক্রমাগত অপপ্রচার এমনকি ব্যক্তিগত চরিত্রহননের অপচেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন,আমি সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের এই দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।আমার সরকারি চাকরি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ এবং ভূসম্পত্তি অর্জনে কোনও বাধা নেই।এটি তাদের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার।

তিনি দাবি করেন,গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে।সেসময় থেকে বিগত ১০ বছরব্যাপী ধীরে ধীরে কৃষিক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রথমে সেখানে আমার পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই খামারের আয় থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসা বৃদ্ধি করা হয়। তিনি বলেন,তার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন।তার বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যে সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।

বেনজীর আহমেদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে বলেন,বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে।এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনও সুযোগ নেই। ঢাকার কাছে বিঘার পর বিঘা কোন জমি নেই।পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই। পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমিও নেই।’

তিনি বলেন,মগবাজার কেন,রমনা,সিদ্ধেশ্বরী এর আশপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিছুই নেই।আনন্দ হাউজিংয়ে একটি প্লট বুকিং দেই এবং কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি।

বেনজীর আহমেদ বলেন,আইজিপি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছি।যার বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।কিন্তু আমি আইজিপি কিংবা র‍্যাব ডিজি থাকাকালীন কোনও প্লট কিনিনি। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে আমি একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছি।নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আমি প্লটটি বিক্রি করেছি।পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোনও প্লট বা বাড়ি কিছুই নেই।রূপগঞ্জে আমাদের কোনও জমি নেই।

ভাওয়াল রিসোর্ট,বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় বেনজীরের পরিবারের মালিকানা আছে,বলে প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই।পদ্মা ব্যাংক এবং ক্যানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই।সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে যা বলা হয়, সেটাও অসত্য।’

তার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়,শুধু নৈতিক এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে তিনি এই ব্যাখ্যা হাজির করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

আরও খবর

Sponsered content