অপরাধ-আইন-আদালত

গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়ম, ইউএনওসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা

  প্রতিনিধি ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ , ১:০৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর প্রতিনিধি।।রংপুরের পীরগাছায় গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মোশারফ হোসেন নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী।একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও আবেদন করেছেন তিনি।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি জানাজানি হয়।এর আগে গত ১০ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বাদী মোশারফ হোসেন উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘগোয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে।

মামলায় অন্য বিবাদীরা হলেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি),উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা,উপজেলা চেয়ারম্যান,তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান,গ্রাম পুলিশ নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সকল সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে রংপুরের জেলা প্রশাসক।

অভিযোগ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৩ জন গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ৫ ও ১৫ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।সেই সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন।

বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বলা হয়। তবে পূর্বে যারা আবেদন করেছিলেন তাদের নতুন করে আবেদনের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়।

গত ২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ হল রুমে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।এতে বাদী মোশারফ হোসেনসহ ৬৫ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।সেদিনই বাছাই শেষে ১৩ জনকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।নারী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।

কোটা পদ্ধতি অনুসরণ না করায় গত ১০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন মোশারফ হোসেন নামে ওই চাকরিপ্রত্যাশী।একই দিন নিজেকে একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদনকারী হিসেবে দাবি করে পীরগাছা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন তিনি।

মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন,গ্রাম পুলিশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আমাকে না নিয়ে সাধারণ কোটায় একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।তার নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়,পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে রাতেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।এ ছাড়া ১৩ গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য হয়েছে বলে সর্বত্র আলোচনা চলছে।

গ্রাম পুলিশ সংক্রান্ত বিধিমালায় চাকরিতে প্রবেশে কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে,সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার মেধাক্রম,শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিবরণীসহ সরকার কর্তৃক সময় সময়,জারিকৃত কোটা পদ্ধতি সম্পর্কিত নির্দেশাবলি,যতদূর সম্ভব,অনুসরণপূর্বক বাছাই কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি তালিকা সুপারিশ করবে।কিন্তু এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে রংপুর জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মহসীন আলী বলেন,গ্রাম পুলিশ নিয়োগে মোশারফ ব্যতীত অন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ছিল না। সর্বক্ষেত্রে নিয়োগে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত।তার আইনগত অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে অন্যায় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন ছুটিতে থাকায় সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন,যেহেতু মামলা করার অধিকার রয়েছে,তারা মামলা করেছে। আমরা আমাদের জবাব আদালতে যথা সময়ে দিব।

আরও খবর

Sponsered content