জাতীয়

কোন দেশ কী নীতি গ্রহণ করল,সে বিষয়ে ভালো অফিসারদের টেনশনের কোনো কারণ দেখি না-এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান

  প্রতিনিধি ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:৫৯:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের সম্পৃক্ততা বেশি থাকায় তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠাও কাজ করছে বলে জানা গেছে।শীর্ষস্থানীয় যেসব কর্মকর্তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, যারা গ্রিনকার্ডের জন্য চেষ্টা করছেন,তাদের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে অন্যদের মুখে।

ঘোষিত ভিসা নীতির আওতায় বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য,আইন প্রয়োগকারী সংস্থা,বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পড়বেন।

সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনের একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি-পরবর্তী পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেছে।এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তারা তুলনামূলক বেশি উদ্বিগ্ন।অন্যদিকে সচিবালয়ে কর্মরতরা বলছেন,সচিবালয়ের গুটিকয়েক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সরাসরি নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে যুক্ত।তাই বেশির ভাগ কর্মকর্তাই নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন।তবে এসব বিষয়ে চাকরিরত কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি।

মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করা এক কর্মকর্তা বলেন,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে।তাই আপাতত উদ্বেগ নেই।কিন্তু নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি কী হয়,তারা সেই টেনশনে আছেন।

একটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জানান,সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।কিন্তু বিএনপি হঠাৎ করে নির্বাচনে এলে সেই মনোভাব থাকবে কিনা সেটিই বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন,নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে সেটা ঠিক।কিন্তু আমেরিকার প্রশাসন ওই পর্যায়ে কাউকে তালিকাভুক্ত করবে কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।’ নিজেদের আড্ডার বিষয় উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা জানান, মাঠ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ ও দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়োজিতদের হয়তো উদ্বেগের কারণ থাকতে পারে।এর বাইরে সচিবালয়ে গণহারে কর্মকর্তারা চিন্তিত নন; তবে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র।

সাবেকদের ভাষ্য—;

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান গতকাল রোববার বলেন, ‘কোন দেশ কী নীতি গ্রহণ করল,সে বিষয়ে ভালো অফিসারদের টেনশনের কোনো কারণ দেখি না।তবে যারা দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ,তাদের টেনশন থাকবে–এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

তিনি বলেন,যারা দুর্নীতি করে ওই দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) সম্পদ জমিয়েছে,পরিবারকে পার করে ভবিষ্যতে নিজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে,আমেরিকার ভিসা নীতির প্রভাব তাদের ওপরেই পড়বে।এমন কর্মকর্তাদের পরিচয় প্রকাশ হওয়া উচিত।এ কর্মকর্তা আরও বলেন,প্রকৃত অর্থে আমাদের দেশের সরকারগুলোই দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য।না হলে প্রশাসনে দুর্নীতিবাজদের উত্থানের কোনো সুযোগ থাকত না।’

সাবেক আরও তিন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা হয়েছে সমকালের।তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন,সব দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্য দেশের কিছু ব্যক্তির ভ্রমণের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে।এই তালিকা বাংলাদেশেও আছে।কিন্তু এটা কোনো দেশই প্রকাশ করে না।তেমনি যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নিয়েছে,সেটা আগে থেকেই আছে।এখন নির্বাচন উপলক্ষে হয়তো বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে সেটার ভিন্ন আঙ্গিকে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

এ কর্মকর্তা আরও মনে করেন,যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে বেশির ভাগ কর্মকর্তার চিন্তার কিছু নেই।প্রথমত, যাদের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া-আসার প্রয়োজন নেই,তারা কেন টেনশন করবে? দ্বিতীয়ত,নির্বাচন-সংশ্লিষ্টতায় খুব বেশি কর্মকর্তা থাকেন না,তাই তাদেরও দুশ্চিন্তার কারণ দেখি না। তৃতীয়ত,নির্বাচনী কাজে যুক্ত আছেন কিন্তু ইতিবাচকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরও চিন্তার কিছু নেই।

কারা নিষিদ্ধ হলেন,জানেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—-;!

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন,যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের কাদের নিষিদ্ধ করেছে,সেটি জানা নেই তাঁর। নিষেধাজ্ঞা যারা দিয়েছে,সেটি তাদের ব্যাপার।

তিনি বলেন,তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) দেশে তারা কাকে যেতে দেবেন,আর কাকে দেবেন না,সেটাও তাদের ব্যাপার।এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই,বলারও কিছু নেই।’

কথিত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের একটি বড় তালিকা বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে,এটি গুজব কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা তারা ডিক্লেয়ার করেছে বলে আমরা শুনেছি।আমাদের কাছে তো চিঠির মাধ্যমে তারা জানায়নি। কাজেই আমরা যেটা শুনেছি,সেটাই জানি।এখন পর্যন্ত কাকে নিষিদ্ধ করেছে,সেগুলো আমরা জানি না।’

আরও খবর

Sponsered content