সারাদেশ

কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন কবলগ্রাসে মানচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে শ্রীপুর-প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় সাধারণ মানুষ

  প্রতিনিধি ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৬:৩০:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ধান,নদী,খাল এই তিনে মিলে বরিশাল।তবে নদীর কারনেই বরিশাল জেলার প্রতিটি মানুষের জীবনে দূর্বিহ-দূর্ভোগের অন্তর্বাস করছে।কালাবদর নদী এখন রাক্ষুসী এক নদীর নাম।যার নাম শুনলে মানুষ আতংকে শিউরে উঠে।মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন শ্রীপুর ইউনিয়নের মানুষ রাক্ষুসে কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর ভাঙনে ঘর-বাড়ী,ফসলি জমি হারিয়ে মানবতায় জীবন যাপন করছে।

এ নদীর প্রবল স্রোতে প্রতিদিন শ্রীপুর এলাকার ৫শ মিটার ভূমি ও শতো শতো ঘর-বাড়ী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।শ্রীপুরের মানুষ কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর ভাঙনে আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

স্হানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নদী সিকস্তি মানুষের শেষ আশ্রয় বসত বাড়ি-ঘর রক্ষার্থে বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ভুক্তভোগীরা।মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর ইউনিয়ন।কালাবদর নদীর ভাঙন রোধে সরকারী কার্যত ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কালাবদর রাক্ষুসে নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর ইউপির শ্রীপুর বাজার,ভূমি অফিস,কমিউনিটি ক্লিনিক ও শ্রীপুর বাহেরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি ছিল।

এব্যাপারে শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী কাজী মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন,কয়কয়েক বছর কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন ছিলনা।আকস্মিকভাবে ৮ বছর ভাঙন কবলগ্রাসে ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর বাজার,সরকারী স্কুল,ভূমি অফিস,মাসজিদ মাদ্রাসা,মক্তব,কমিউনিটি ক্লিনিক সহ ২২শ একর ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর কালাবদর নদীর ভাঙনে বিলীন করে নিয়েছে।আমরা একজন ব্যবসায়ী ৭/৮ বার করে নদীর ভাঙন কবলগ্রাসে পড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলার জন্য গড়ে ১০-২০ লক্ষাধিক টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে।সহমত পোষণ করে শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা।

মোঃ জলিল সিকদার নামে এক বৃদ্ধা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্মিত-হতবাক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।তিনি বলেছেন,শ্রীপুর ইউনিয়ন থেকে ভোলার সদর ভেদুরিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব ৪/৫ কিলোমিটার সেখানে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে ৬শ কোটি টাকার প্রোজেক্ট দেয়া হয়েছে।শ্রীপুর ইউনিয়নের কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন রোধে সরকারী কোনো প্রকল্প নেই।শুধু ৭ কিলোমিটার ভাঙন রোধে সরকারী ৫শ কোটি টাকার প্রোজেক্ট দেয়া হলে আমাদের নামকরা ঐতিহ্যবাহী সিকদার বাড়ি,নলী বাড়ি,বেপারী বাড়ি,খান বাড়ি,কাজী বাড়ি,ফকির বাড়ি,হাজী বাড়ি,মোল্লা বাড়ি,হাওলাদার বাড়ি,তালুকদার বাড়ি,চৌকিদার বাড়ি,জোমাদার বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হতে না।এখনো শীতের মৌসুমে যেভাবে কবলগ্রাসে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাচ্ছে।তাহলে বর্ষার আগেই শ্রীপুর ইউনিয়নের নাম চিরতরে মুছে যাবে।

শ্রীপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা ও মেম্বার মোহাম্মদ হাফেজ খান বলেন-কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর কবলগ্রাসে মানুষ মানবতায় জীবন যাপন করেছে।কোনোমতে রাস্তার পাশে প্লাষ্টিক কাগজের ছাউনি দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেকায়দায় শতাধিক পরিবার আছে।গ্রামের সকল মানুষ অসহায়ত্ব দিন কাটাচ্ছেন।

শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ শাহজাহান মৃধা বলেছেন,স্হানীয় মানুষ নিঃস্ব গরীবের পক্ষে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন হাসিনার কাছে আকুল আবেদন,যে শ্রীপুর রক্ষার্থে জনগনের আশঙ্কা পূরনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।আমরা জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি।

এব্যাপারে শ্রীপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ মোল্লা সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন,শ্রীপুর ইউনিয়নের কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন রোধে সরকারীভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন।শ্রীপুর ইউনিয়নের কালাবদর রাক্ষুসে নদীর তীরে ৪শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি রক্ষার্থে একাধিক বার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ১৩শতাধিক বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।শীতের মৌসুমেও আকস্মিক ভাঙনের মুখে গত এক সপ্তাহে দুই কিলোমিটার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিলের ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ সহ স্হানীয় বিত্তবানদের সহযোগিতায় ভাঙন রোধে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে সরকারের কোনো আন্তরিকতা নেই।

এবিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোঃ আনিছুর ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন,শ্রীপুর ইউনিয়নের কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন রোধে উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতার কমতি নেই।স্হানীয় জনগণের সহায়তায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সংসদ সদস্য পংকজ নাথ সরোজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিকভাবে ২কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,কালাবদর রাক্ষুসে নদীর কবলগ্রাসে দিশেহারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন,জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর জাহিদ ফারুক শামীম সাংবাদিকদের জানান,কালাবদর তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে সাড়ে ৫শ কোটি টাকার প্রোজেক্ট দেয়া হয়েছে।কালাবদর-তেতুলিয়া নদীর ভাঙনরোধে ৭শ ৯৭ কোটি টাকার প্রোজেক্ট দেয়া হয়েছিল।কালাবদর রাক্ষুসে নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বিস্তারিত আসছে——–বরিশালের স্হানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হবে।

আরও খবর

Sponsered content