প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৩ , ৫:৪৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিনিয়তই বাড়ছে শাকসবজির দাম।তবে সবকিছু ছাপিয়ে ঝাঁজ বাড়ছে কাঁচা মরিচের বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। এতে দিশেহারা ভোক্তারা।
শুক্রবার (১২ মে) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বেশ কয়েক মাস ধরেই অস্থির দেশের মুরগি ও চিনির বাজার।এবার এ তালিকায় নাম উঠালো কাঁচা মরিচ। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। বাড়তি অন্যান্য সবজির দামও।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়,প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা।গত সপ্তাহেও যেটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। মরিচের এ ঊর্ধ্বমুখী দামে বিপাকে ক্রেতারা।
আলামীন হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় কিনলেও সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দিয়ে। তিনি আরও বলেন,অন্যান্য সবজি না হলেও তরকারি রান্না করা যায়।তবে কাঁচা মরিচ ছাড়া তরকারি একেবারেই বেমানান।তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
আর বিক্রেতারা বলেন,প্রচণ্ড গরমে শাকসবজির সরবরাহ কম।তাই দাম একটু চড়া।এভাবে গরম চলতে থাকলে দাম আরও বাড়তে পারে।
এদিকে,বাজারে মরিচের পাশাপাশি চড়া পেঁয়াজ,ধনেপাতা, করলা ও বেগুনসহ অন্যান্য অনেক সবজির দাম।বিক্রেতারা জানান,বাজারে গত দুই সপ্তাহ থেকেই বাড়তি ধনেপাতার দাম। বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।আর সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
এছাড়া প্রতিকেজি টমেটো ৫০ টাকা,করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা,ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা,শসা ৬০ টাকা,শজনে ১২০ টাকা,পেঁপে ৮০ টাকা,কচুর লতি ৬০ টাকা,বরবটি ৮০ টাকা,পটোল ৭০ টাকা,কাঁচা আম ৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।আর প্রকারভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়।
স্বস্তি নেই মুরগির বাজারেও।দুদিনের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত।প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়।আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৬০ টাকা,লাল লেয়ার ৩৩০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়।এ ছাড়া প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম।প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।বিক্রেতারা বলছেন,ঈদের পর এখনও বাড়েনি গরু ও খাসির দাম। এছাড়া বাজারে প্রতি ডজন সাদা ডিম ১৪৪ টাকা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার,রায়সাহেব বাজার,কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার দাম বেঁধে দিলেও অস্থিরতা কাটেনি চিনির বাজারে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ মে) খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১২০ টাকায়,আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১২৫ টাকায়।এছাড়া প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা ও পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।আর প্রতি কেজি পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য ১১৯ টাকা ও পরিবেশক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ টাকা।
এদিকে সরকারের বেঁধে দেয় দাম উপেক্ষা করেই বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়;আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান,বাজারে চিনির সরবরাহ ঠিকই আছে; কোনো ঘাটতি নেই।তবে মিলার পর্যায় থেকেই কিনতে হচ্ছে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি টাকায়।তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
দাম বেড়েছে মাছের বাজারেও।প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা,কাতলা ৩৭০ থেকে ৪৮০ টাকা,টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা,চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও আইড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন,নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না।এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন,কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে।বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।