ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

পেঁয়াজের বাজার শীতল করতে আমদানির অনুমতি দিলেন-কৃষি মন্ত্রণালয়

  প্রতিনিধি ৪ জুন ২০২৩ , ৪:১৪:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মৌসুম শেষ হতে না হতেই তেঁতে ওঠা পেঁয়াজের বাজার শীতল করতে আমদানির অনুমতি দিল কৃষি মন্ত্রণালয়।

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় করতে আমদানির বিকল্প নেই জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর দর ১০০ টাকায় পৌঁছে যাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত এল।

রোববার বিকালে মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বার্তায় এ কথা জানানো হয়।এতে বলা হয়, “আগামীকাল (সোমবার) থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়।”

পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের,শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করা হয় এ বার্তায়।

ঈদের আগে থেকে পেঁয়াজের হঠাৎ বাড়তি দর ঈদ শেষে চড়তে শুরু করে।সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে,এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দর ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় পৌঁছে।

দাম ৬০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সাংবাদিকদের তিনি সেদিন দাম না কমলে আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন।

তবে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই।

প্রথমবারের মতো আমদানির কথা বলার ৯ দিন পর বাণিজ্যমন্ত্রী আবার একই কথা বলেন।কিন্তু সেদিন ঢাকার বড় বাজারে পেঁয়াজের দর ওঠে ৮০ টাকা,গলির বাজারে তা ওঠে ৯০ টাকা।

একই দিন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, “আমরা এখনও বাজারটা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।আমরাও দেখছি পেঁয়াজের দামটা বাড়ছে।আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

সেদিন রাজধানীতে এক আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে।কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে।ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে।

“বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”

বাণিজ্য থেকে কৃষিতে চিঠি যাওয়ার খবরে পেঁয়াজের দর কিছুটা নিম্নমুখী হয়।কেজিপ্রতি দাম কমে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

কিন্তু কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক এ নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করার কথা জানান।বিপুল সংখ্যক পেঁয়াজ চাষি মুনাফা পাচ্ছেন,এটি ছিল আরও অপেক্ষার পেছনে তার যুক্তি।

তবে বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম কোনোভাবেই প্রতিকেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়,এমন মন্তব্যও করেন তিনি; বলেন, “ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এধরনের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তারা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন।ভেতরে ভেতরে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।”

কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত না জানানোয় আবার বাড়তি দরে ফিরে যায় রান্নার উপকরণটি।এক পর পর্যায়ে দাম আরও বেড়ে যায়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানানোর দিন রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজের দর মান থেকে ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছিল বলে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ‘ভেতরে ভেতরে’ যে ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন,তা আর প্রকাশ পায়নি।যে কারসাজির কথা তিনি বলেন,তার জন্য কেউ শাস্তিও পায়নি।

সরকারি হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি এবার উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের কাছাকাছি,যা বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি।

অবশ্য পেঁয়াজ পচনশীল এবং সংরক্ষণকালে ৩৫ শতাংশের মতো নষ্ট হয়,ওজনও কমে।আবার কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ রাখতে হয় বীজের জন্য।তাই কয়েক লাখ টন আমদানি করতেই হবে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৮ টাকার মত।ভারতে উৎপাদন খরচ হয় আরও কম।এ কারণে দাম ধরে রাখতে চেয়েছিল সরকার।

কিন্তু আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজ উঠতে না উঠতেএমন দর বৃদ্ধি এর আগে দেখা যায়নি।কৃষক,ব্যবসায়ী,কৃষি কর্মকর্তা,সবাই এর পেছনে মজুদদারিকে দায়ী করেছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বেড়েছে।দুবছর আগে যেখানে উৎপাদন হত ২৫ লাখ টনের মতো,এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এবছর ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন।২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন।

রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে এক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, “পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয় সংকটের মতো।

“পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়;পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়,ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য,সবসময়ই আমরা চাষি,উৎপাদক,ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।”

আরও খবর

Sponsered content