অর্থনীতি

করোনা মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে

  প্রতিনিধি ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:৫০:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।গত ৩২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যও বেড়েছে। ২০১৬-২১ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু শঙ্কার কথা হচ্ছে, ২০২১-২৬ সালে দেশের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার কমে আসতে পারে। এই সময় বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০১৬-২১ কালপর্বে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৪৫। কিন্তু ২০২১-২৬ কালপর্বে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটা নিচে নেমে হতে পারে ৯৯। কুরিয়ার ও লজিস্টিক সেবা প্রদানকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ডিএইচএলের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

করোনা মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য, বিশেষ করে পণ্যবাণিজ্য। ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যের সংকোচন হয় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, এর মধ্যে পণ্যবাণিজ্যের সংকোচন হয় ৫ শতাংশেরও বেশি। তবে ২০২১ সালেই বিশ্ববাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ায়।

বিশ্ববাণিজ্যের এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।বলা যায়, এশিয়া এখন বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ভরকেন্দ্র।গত বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ।এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে আর এই প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম।অথচ ঠিক এই সময়ে বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খর্ব হবে বলে পূর্বাভাস।

ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন:-

বাংলাদেশে যেখানে পিছিয়ে পড়ছে,সেখানে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ভারত এগিয়ে যাচ্ছে।ভারতের রপ্তানি খাত ভালো করছে। মহামারির মধ্যেও দেশটির রপ্তানি খাত অর্থনীতির অন্যান্য খাতের চেয়ে ভালো করেছে। এর সঙ্গে আছে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের চীন ছাড়ো নীতির কারণে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা—এসব কারণে ভারতের বাণিজ্যে চাঙা ভাব অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিএইচএল ট্রেড গ্রোথ অ্যাটলাস ২০২২-এ বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে ভারতের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে।

একই সময়ে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আরেক দেশ ফিলিপাইনের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ হতে পারে।অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি,বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও মহামারিজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ফিলিপাইনের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ভিয়েতনাম এখন বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান তারকা। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।বিশ্ববাণিজ্যে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবস্থান ছিল ৩ নম্বরে।তবে পূর্বাভাস হচ্ছে, ২০২১-২৬ সালে ভিয়েতনামের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নেমে আসবে এবং তাদের অবস্থান হবে ১৬।

তবে ডিএইচএলের ট্রেড গ্রোথ অ্যাটলাস শীর্ষ ১০–ভুক্ত দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় ভিয়েতনাম একমাত্র দেশ,গত পাঁচ বছরে যাদের বাণিজ্যের সর্বাঙ্গীণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে,অর্থাৎ বাণিজ্যের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারও অনেক বেশি।

এই সফলতার আংশিক কারণ হচ্ছে,সরকারের ব্যবসা-বান্ধব নীতি,ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অবকাঠামো,বর্ধনশীল অর্থনীতি, যেগুলোর কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সহজ হয়েছে।এতে বোঝা যায়,ভিয়েতনাম এখন বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে।টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক শিল্পে তারা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।

বিনিয়োগকারীরা চীন ছাড়ছেন——

এদিকে করোনা মহামারির পর উৎপাদনকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই এককাট্টা হচ্ছেন।এই প্রক্রিয়া মহামারির আগেই শুরু হয়েছে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে,তখন থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প হিসেবে ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড ও ভারতকে বেছে নিচ্ছেন। আর চীন এখনো শূন্য কোভিড নীতি অব্যাহত রাখার কারণে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

আঞ্চলিকীকরণ ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীরা সরবরাহব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়িক নেতাদের ওপর পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা গেছে,৭৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী সরবরাহব্যবস্থার ভূগোল পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪২ শতাংশ ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি গ্রহণ করেছেন।

কী করণীয়:-

দেশের রপ্তানির ৮৫ শতাংশের বেশি আসে একটি খাত থেকে—তৈরি পোশাকশিল্প। অন্য কোনো খাত এখন পর্যন্ত সেভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি।অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন,রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ দরকার।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন,গত এক দশকে বাংলাদেশের বাণিজ্য-জিডিপি ও রপ্তানি-জিডিপির অনুপাত অর্ধেক হয়ে গেছে।সেই সঙ্গে রপ্তানিতে একটি খাতের ভূমিকা আরও বেড়েছে।অর্থাৎ রপ্তানির বহুমুখীকরণ হয়নি।

সেলিম রায়হান আরও বলেন,ভিয়েতনাম মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে ৭০টি আর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কেবল ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছে।ভিয়েতনাম বিদেশি বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে তারা,যা বাংলাদেশ করতে পারেনি।সে জন্য তাঁর পরামর্শ,বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content