প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২৩ , ৪:৫২:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।দক্ষিণ সিটির তখনকার মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গোস্সা নিবারণী পার্ক নামটি দিয়েছিলেন। এসব কথা বলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওসমানী উদ্যান ঘিরে প্রায় ৯০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নিয়েছিলেন। কথা ছিল,১০ মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।১০ মাস নয়, ৪ বছর ১০ মাস পর ২০২২ সালের ১ অক্টোবর ওসমানী উদ্যানে গিয়েছিলাম।দেখেছিলাম,উদ্যানটির উন্নয়নকাজ কংক্রিটের অসমাপ্ত অবকাঠামোর ভিড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।ভেতরটা জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। মানুষ সেখানে ঢুকতেই পারছে না,বরং বসছে মাদকের আড্ডা।
এরও সাড়ে সাত মাস পর মঙ্গলবার (১৬ মে) গিয়ে দেখা যায়,উদ্যানের প্রবেশমুখে এখনো লেখা ‘ওসমানী উদ্যানে অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চলিতেছে।সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ—আদেশক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।অবশ্য সেই নিষেধ শোনার ঠেকা মাদকাসক্তদের নেই।টিনের বেড়ার ভাঙা অংশ দিয়ে তারা উদ্যানের ভেতরে ঢোকে,মাদক সেবন করে। পার্কে হাঁটার জন্য প্রবীণেরা যান না,খেলার জন্য শিশুরা ঢোকে না।
আরও দেখলাম,কংক্রিটের অসমাপ্ত স্থাপনা আগে যেমন পড়ে ছিল,এখনো তেমনই পড়ে আছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বসানো কয়েকটি সড়কবাতির খুঁটি (ল্যাম্পপোস্ট) ভেঙে পড়েছে।স্থাপনা নির্মাণের জন্য যে গাছগুলো কাটা হয়েছিল, তার গুঁড়ি এখনো পড়ে আছে।
নগর ভবনের উল্টো দিকে উদ্যানের প্রবেশপথে পাওয়া গেল এক ব্যক্তিকে,যিনি নিজেকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।নিজের নাম বলেন সুমন।জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিনের বেড়া বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে ফেলা হয়েছে।দিনের বেলাই সেখান দিয়ে মানুষ ঢুকে মাদক সেবন করে।রাতের বেলা কী হয়,কারা ঢোকে,তা প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায় না।
ঢাকার মধ্যে এমনিতে খোলা জায়গা কম।গাছগাছালিতে ভরা জায়গার অভাব আরও প্রকট।এর মধ্যে ওসমানী উদ্যান সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ।উদ্যানটির উন্নয়নকাজে ইতিমধ্যে প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।আরও ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।কিন্তু উদ্যানটি কবে খুলবে,মানুষ কবে সেখানে গিয়ে ‘রাগ কমাবে’,এর কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
রাজধানীর গুলিস্তানে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের উল্টো দিকে ওসমানী উদ্যান।এর এক পাশে সচিবালয়।উদ্যানটির আয়তন প্রায় ২৪ একর।এতে অসংখ্য গাছ ও দুটি জলাশয় রয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর নামে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছে।সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলা আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন—এমন একটি ঐতিহাসিক কামান এই উদ্যানে রাখা আছে।কামানটি আগে ছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।সেখানে আনা হয়েছিল সোয়ারীঘাট থেকে।
উন্নয়নকাজ শুরুর আগে ওসমানী উদ্যানে বিকেলে হাঁটতে যেতেন আদি ঢাকাবাসী ফোরাম নামের একটি সংগঠনের সদস্যসচিব ও পুরান ঢাকার বাসিন্দা জাভেদ জাহান (৫২)। সেটা এখন পারেন না।তিনি বলেন,পুরান ঢাকার মানুষের জন্য ভালো জায়গা ছিল ওসমানী উদ্যান।এটি এভাবে পড়ে থাকা অগ্রহণযোগ্য।
সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে ওসমানী উদ্যানের ইতিহাস জানতে চেয়েছিলাম।তাঁরা জানাতে পারেননি। কিছুটা ধারণা দিলেন আদি ঢাকাবাসী ফোরামের জাভেদ জাহান।তিনি বলেন,ওসমানী উদ্যানটি ছিল মূলত রেলওয়ের জমি।এক পাশে রেলওয়ের কলোনি ও ব্রিটিশদের তৈরি একটি পাঠাগারও ছিল।সেখান থেকে একসময় রেলওয়ে সরে যায়। ওসমানী উদ্যানের জমিতে অবকাঠামো তৈরির চেষ্টাও হয়েছিল।এর বিরুদ্ধে ‘ওসমানী উদ্যানের ১১ হাজার গাছ রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি নাগরিক আন্দোলনও গড়ে ওঠে।
উন্নয়নকাজ শেষ করার কথা ১০ মাসে।সাড়ে পাঁচ বছরেও হয়নি।
গাছ কেটে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে,যা অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে আছে।
এই আন্দোলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। তখনকার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও প্রচারপত্র খুঁজে বের করলাম।তা থেকে জানা গেল,ওসমানী উদ্যানের জমিতে ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার।তখন ১১ হাজার গাছ রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন কবি শামসুর রাহমান,শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেকে।ওসমানী উদ্যানকে পুরান ঢাকার ফুসফুস বলা হয়েছিল ১৯৯৭ সালের আন্দোলন থেকেই।
তখনকার আন্দোলনকারীরা জানান,প্রতিবাদের মুখে ওসমানী উদ্যানে ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্র করার চিন্তাটি সরকার বাদ দেয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উদ্যানের জমির মালিকানা দাবি করেন এক ব্যক্তি।একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল।সে জন্য রাতের বেলা গাছ কাটা হয়েছিল।সেটা তখন প্রতিহত করা হয়।
‘ওসমানী উদ্যানের ১১ হাজার গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুর বলেন, ‘ওসমানী উদ্যান সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাখা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।ওই উদ্যান উদ্ধার করে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলাম,যাতে এই শহরের এবং দেশের অন্য উদ্যানগুলো উদ্ধার করা হয়,সংরক্ষণ করা হয়।সেটা হয়নি।’ উদ্যান নগরের ফুসফুসের মতো বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,নগরের অনেক উদ্যান অনেকটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মতো হয়ে গেছে।সেগুলো সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
২০১৭ সালে যে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়,তার ঠিকাদারি কাজ দেওয়া হয় তিনটি ভাগে।প্রথম ভাগে ছিল একটি পাঠাগার,দুটি খাবার চত্বর,গাড়ি রাখার স্থান,ব্যায়ামাগার, টেবিল টেনিস ও বিলিয়ার্ড খেলার ব্যবস্থা,এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান,বিনোদনকেন্দ্র এবং নগর জাদুঘর নির্মাণ। দ্বিতীয় ভাগে ছিল শিশুদের খেলার জায়গা,ভলিবল,ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা,লেকের পাড় উন্নয়ন,ঘাট তৈরি, মাঠ উন্নয়ন ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্র স্থাপন। তৃতীয় ভাগে ছিল পানি পরিশোধন ব্যবস্থা স্থাপন,স্বাধীনতা চত্বর ও কফি শপ, পানি সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা,নৌকা রাখা,ভাস্কর্য বসানো, পুরান ঢাকার থ্রিডি স্থাপত্য নকশার মডেল স্থাপন ইত্যাদি।
এত কিছুর আয়োজন একটি উদ্যানে কেন প্রয়োজন হবে, সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছিল।তবে তা আমলে নেওয়া হয়নি। সাঈদ খোকনের সময় তিনটি ভাগে একই ঠিকাদারকে প্রায় ৯০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়।একটি ভাগের কাজও গত সাড়ে পাঁচ বছরে শতভাগ শেষ হয়নি।দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে,এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫৪ কোটি টাকার কাজ করেছে।এর মধ্যে বিল দেওয়া হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা।
দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে ২০২০ সালে দায়িত্ব নেন শেখ ফজলে নূর তাপস।দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে,তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই উদ্যানটির অবস্থা দেখতে চান।এরপর তিনি দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেন।তবে ঠিকাদার সময়মতো কাজ করেননি।বছর দেড়েক আগে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যতটুকু কাজ সম্পন্ন করেছে, ততটুকুর বিপরীতে দক্ষিণ সিটির কাছে আরও ৫ কোটি টাকা পাবে।জামানত বাবদ করপোরেশনের কাছে তাদের ৫ কোটি টাকা জমা আছে।ফলে সিটি করপোরেশনের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মোট পাওনা প্রায় ১০ কোটি টাকা।তবে ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা।বাকি ৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ওসমানী উদ্যানের তিনটি ভাগের কাজই পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটস লিমিডেট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী। দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে,তিনি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আটক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ফজলুল করিম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতেন জি কে শামীম।তাই জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওসমানী উদ্যানের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে ফজলুল করিম চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি নানাভাবে।মুঠোফোনে ফোন করেছি,বিষয় জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়েছি। তিনি সাড়া দেননি।তাঁর ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হইনি।তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির দুজন প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন,করপোরেশনের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে কাজটি ফজলুল করিম চৌধুরীকে পাইয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন ওরফে রতন।দুই প্রকৌশলী আরও বলেন, মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারে,যেনতেনভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। ফলে তারা কাজ অসমাপ্ত রাখে।
অভিযোগটির বিষয়ে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য চাইলাম। তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন,‘আমি কি কাজ দেওয়ার মালিক? আমার কি কাজ দেওয়ার ক্ষমতা আছে?’
উদ্যান ঘিরে এত কিছু কেন?!
নগর-পরিকল্পনাবিদ,স্থপতি ও উদ্যান রক্ষার আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন,সবুজ একটি উদ্যানে কেন জাদুঘর করতে হবে,কেন ঝলমলে আলোর ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, কেনই–বা সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করতে হবে, বিলিয়ার্ডের মতো খেলার আয়োজন করাও কেন? তাঁরা বলছেন,ওসমানী উদ্যানে উন্নয়নের নামে নানা স্থাপনা নির্মাণ করে মূলত সবুজ কমিয়ে ফেলা হয়েছে।স্থাপনা করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা হয়েছে।তাঁদের অভিযোগ, এত সব আয়োজন করা হয়েছিল বিপুল অর্থ ব্যয় করতে।
ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নকাজের নকশা ও পরিকল্পনার পরামর্শক ছিলেন স্থপতি রফিক আজম। তিনি বলেন, উদ্যানের নকশায় যেসব উপাদান যুক্ত করা হয়েছে,তা করা হয়েছে দক্ষিণ সিটির পরামর্শেই।তবে গাছ কাটাকে নিজের ‘অদ্ভুত ভুল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।বলেন,গাছ রক্ষা করে কী করা যেত, সেটি বিবেচনা করা তাঁর উচিত ছিল।
রফিক আজম আরও বলেন,তিনি যে নকশা করেছিলেন, সে অনুযায়ী কাজ শেষ হলে মানুষ তাঁকে প্রশংসা করত।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২১ সালের হিসাবে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,বনানী পার্ক ও গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের চেয়ে ওসমানী উদ্যানে সবুজ এলাকা কম,মাত্র ৪৮ শতাংশ।অবশ্য স্থপতি রফিক আজম এ দাবি ঠিক নয় বলে দাবি করেন।
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় আছে,উদ্যানে ৫ শতাংশের বেশি অবকাঠামো করা যাবে না।আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশ স্থাপনাও অনুমোদন করে না। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠে কংক্রিট আর কংক্রিট।বিশ্বব্যাপী কোনো পার্কের নকশায় এত কংক্রিট নেই।তিনি বলেন, শতাংশের হারে সামান্য এদিক-ওদিক হতে পারে,তবে ওসমানী উদ্যানে সবুজ এলাকা যে কমিয়ে ফেলা হয়েছে,সেটা তো ধ্রুব সত্য।
ওসমানী উদ্যানে মাটির নিচে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা (আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং) করতে চেয়েছিল দক্ষিণ সিটি। তবে চিন্তাটি পরে বাদ দেওয়া হয়।
একটি উদ্যানে এত কংক্রিটের স্থাপনার প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উদ্যান থাকবে উন্মুক্ত। সেখানে মানুষ সকাল-বিকেল হাঁটবে,শিশুরা খেলবে,নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানে এত স্থাপনার একেবারেই প্রয়োজন নেই।
‘খুলে দেওয়া উচিত’?
বছর দেড়েক আগে ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নকাজের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হলেও নতুন ঠিকাদার এখনো নিয়োগ হয়নি।দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ওসমানী উদ্যানে আরও ৫৫ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে আগের ঠিকাদারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে ১৫ কোটি টাকা লাগবে।১৭ কোটি টাকা লাগবে উদ্যানের ভেতরে জলাশয়ের পানি ধরে রাখা ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে।২৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা,বিদ্যুতের উপকেন্দ্র স্থাপন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক কাজ করতে।সব মিলিয়ে ব্যয় ছাড়াবে ১০০ কোটি টাকা।সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্থ নতুন করে বরাদ্দ করা হয়নি।আগেই বরাদ্দ ছিল।
কবে নাগাদ উদ্যানের কাজ শেষ হবে,তা জানতে চেয়েছিলাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক খায়রুল বাকেরের কাছে।তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তা বলেন,সম্প্রতি নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে মেয়র অনুমোদন দিয়েছেন। দরপত্র আহ্বান করে ঠিক সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে উদ্যানের বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
ওসমানী উদ্যানে এত স্থাপনা,শতকোটি টাকা ব্যয় ও মানুষের প্রবেশ বন্ধ রাখার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলাম একজন স্থপতির কাছে,যিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব।তিনি বলেন, উন্মুক্ত এই উদ্যানে এত বাগাড়ম্বরের প্রয়োজনই ছিল না।এখন যত দ্রুত সম্ভব উদ্যানটি নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া উচিত।