জাতীয়

ইনশাআল্লাহ- ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ-প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:৩৩:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।। আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,ইনশাআল্লাহ- ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ।স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আর ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য ডেল্টা প্ল্যানও আমরা করেছি।এই বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যেন বংশ পরম্পরায় সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং উন্নত জীবন পায় সেজন্যই এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।কেউ আর থামাতে পারবে না।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা গড়ে তুলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

বুধবার পাঁচ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৫ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

তিনি আরও বলেন,এই বাংলাদেশের ওপর যেন আর কারো কালো থাবা না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে,সতর্ক থাকতে হবে।জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশ রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাআল্লাহ গড়ে তুলব।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ,গাজীপুর,মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল এ অনুষ্ঠান।

সরকারপ্রধান বলেন,আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ।ইউনিয়ন পর্যন্ত অনলাইনে যোগাযোগের ব্যবস্থা আমরা করেছি।তাছাড়া রাস্তা-ঘাট ও পুল করেছি,এসবের উন্নতি করে দিয়েছি।বাংলাদেশ এই ১৪ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

তিনি বলেন,আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি।রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করেছি এবং আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে এদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন।জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলমত নির্বিশেষে সব বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশি বন্ধু এবং মিত্র শক্তির সদস্যদেরকে সম্মান দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছি।দলমত নির্বিশেষে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য এই সম্মানের ব্যবস্থা আমরা করেছি।৭১ সালে যারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন,তাদেরকে সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য মনে করি।

তিনি বলেন,সেজন্যই মুক্তিযোদ্ধারা মারা গেলে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান পান সে ব্যবস্থা করেছি।এ ছাড়া আমরা সরকারে আসার পর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা যেন বংশ পরম্পরায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়,সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনলাইনে ভাতা দেওয়া এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য ম্যানেজমন্টে ইনফর্মেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজও গড়ে তুলেছে।এটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের সঙ্গেও সংযুক্ত রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন,মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,এখনো অনেক জায়গা অনাবিস্কৃত রয়ে গেছে সেগুলো খুঁজে বের করবেন।ইতোধ্যে প্রায় ২০ হাজার সমাধিস্থল সংরক্ষণ করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ২৯৩টি উপজেলার ৩৬০টি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ বা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি উপজেলায় আলাদা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স করা হচ্ছে।এতে মানুষ জানতে পারবে এই যুদ্ধ আমাদের জন্য কত গৌরবের ছিল বা কাদের আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা অথবা কাদের আত্মত্যাগে আজকে এই সম্মান পাচ্ছি সেটা যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ স্মরণ করতে পারে।

তিনি বলেন,আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে যে বিজয় অর্জন করেছি,সেটা যেন মানুষ ভুলে গিয়েছিল’উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল,তারাই প্রধানমন্ত্রী,মন্ত্রী,উপদেষ্টা হয়ে ক্ষমতায় বসেন।স্বাভাবিকভাবে তখন মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।এমনকি মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হলে চাকরি দেওয়া হতো না।এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশ ছিল ২১ বছর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছিল। যে নির্বাচনে ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে এই ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন। তাদের ভোট চুরি হয়েছিল বলে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সেজন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার একটা দিন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ,গোপালগঞ্জ,গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তর করেন।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি।

অনুষ্ঠানে ‘বীর নিবাস’-এর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

দুটি শয়নকক্ষ,একটি বসার ঘর,একটি রান্নাঘর এবং একটি করিডোরসহ একতলা বিশিষ্ট প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ ১৪ দশমিক ১০ লাখ টাকায় নির্মিত এবং দেশের জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজে করা।এ ছাড়া রান্নাঘরের পাশে একটি সিমেন্টের উঠান,একটি নলকূপ, একটি বাথরুম এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির শেড রয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ সরকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণের জন্য ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে।

আরও খবর

Sponsered content