রাজনীতি

আমার জীবনের মৃত্যু থেকে বাঁচবার স্বরণীয় সেই ভয়াল একুশে আগষ্ট

  প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২৩ , ১০:২৪:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।২০০৪ সালের ২১ শে আগষ্ট আজ ১৯ বছর পুর্ন হয়ে গেল।শোকের মাসের এই দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিত ভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন।আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী।সাংবাদিকেরাও আহত হন।

তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার।সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।কামরাঙ্গীরচর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক জান্নাতুল রায়হান এর নেতৃত্বে একটি মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে গিয়েছিলাম আমি তখন ট্রাক মঞ্চের পার্শে দারিয়ে বক্তৃতা শুনছিলাম।আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়।বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড।কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল।সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন।আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ঠিক পার্শেই দাড়িয়ে বক্তৃতা শুনছিলাম কখন যে পড়ে গিয়েছি খেয়াল করিনি জ্ঞান ফিরবার পর দেখি রাস্তার ঢালে রক্তমাখা অবস্থায় ড্রেনে পড়ে আছি আমাকে কেউ একটু ধরেনাই তেমন বড় আঘাত না পেলেও প্রানভয়ে ছোটাছুটি করা মানুষের পায়ের পৃষ্ঠের আঘাত বুকেপিঠেআজও কঠিন হয়ে যায়,তখন নিজে উঠে দাড়িয়ে কোন রকম মেইন রোডে আসলাম,তখন কামরাঙ্গীরচর থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি শ্রদেয় মোঃ আবুল হাসেম ভাই আমাকে কোলে তুলে একটু সামনে এসে একটি রিকসায় তুলে দেন আমি তৎকালীন কামরাঙ্গীরচরের কুড়ারঘাটে বাসায় আসতে পেরেছিলাম।

সেসময় ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ।লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনের পিচঢালা পথ।

নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।ভেসে আসে শত শত মানুষের গগনবিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য আজও চোখে ভেসে ওঠে তখন নীরব চিৎকার থামাতে পারিনা শরীরে এখনও অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হয়ে বেদনায় কষ্ট পাই সেই সময়ে গ্রেনেড হামলা সম্বলিত একটি পোষ্টারের ছবি আমার ঘরে লাগিয়েছিলাম, তৎকালীন সময়ে সেই অপরাধে কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ আমাকে সহ যুবলীগের আরও চারজন তারা মিয়া,মানিক মিয়া,কালু ভাইকে ধরে রাত তিনটায় থানায় নিয়ে যায়, আমার নবজাতক সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নীজের অজান্তেই চোখ গড়িয়ে পানি ঝড়েছিল।তিনদিন হাজতবাস করেছিলাম পুলিশ আমাদের কে থানায় আটকে রেখেছিল তিনদিন পর ছেরে দিয়েছিল তখন থেকেই আমি লাল রংয়ের জামা পড়ি এটি আমার সেই স্মৃতির ইতিহাস।যারা এতবড় একটি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং এঘটনায় আহতদের চিকিৎসা অনিশ্চয়তা দেওয়া হোক।

সেই ঘটনায় নিহত সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি, মহান রাব্বুল আলামিন শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন,আমিন।

আরও খবর

Sponsered content