প্রতিনিধি ৫ জুলাই ২০২২ , ৯:২৭:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:-কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টারগুলোয় নেই মানুষের দীর্ঘ সারি।পুরুষদের জন্য নয়টি কাউন্টারে কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পাচ্ছেন। নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কাউন্টারে টিকিট আছে। পাশাপাশি অনলাইনেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র। গত চার দিনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট কেনার যে দীর্ঘ সারি, মানুষের ভোগান্তি দেখা গেছে, তা আজ একেবারেই নেই। তবে কাঙ্ক্ষিত টিকিট কিনতে গতকাল সন্ধ্যা ও রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট হাতে পেয়ে খুশি টিকিটপ্রত্যাশীরা।
তেমনই একজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আবদুস সালাম। পেশায় গাড়িচালক এ ব্যক্তি গতকাল সোমবার সকাল সাতটায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে টিকিটের সারিতে দাঁড়ান। সারা দিন পার করে গতকাল সারা রাত তিনি স্টেশনেই ছিলেন। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে। সালাম বলেন, ‘ঈদে প্রতিবার ট্রেনে করে বাড়ি যাই। বাসে যেতে সময় ও টাকা দুটোই বেশি লাগে। কিছুটা ভয় ছিল, টিকিট নাও পেতে পারি। কিন্তু সাড়ে ২৫ ঘণ্টা পর টিকিট হাতে পেলাম।’
ঈদযাত্রা উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে রেলপথের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে ৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হয়। আজ বিক্রি হচ্ছে ৯ জুলাইয়ের টিকিট।
গতকাল রাত ১১টায় কমলাপুরে এসে টিকিটের সারিতে দাঁড়ান আশিকুর রহমান। বাড্ডার এ বাসিন্দা এবারের ঈদে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে যাবেন। তিনি আজ সকাল ৯টার দিকে দুটি টিকিট কেনেন। আশিকুর বলেন, ‘দুটি টিকিট চেয়েছিলাম, দুটিই কিনতে পেরেছি। সারা রাত স্টেশনে পেপার বিছিয়ে ছিলাম। রাতে পাশের হোটেলে খেয়েছি। টিকিট হাতে পেয়ে মনে হচ্ছে কষ্ট করাটা স্বার্থক হলো।’
এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের অর্ধেক বিক্রি হয় স্টেশনগুলোর কাউন্টারে। বাকি অর্ধেক অনলাইনে। তবে অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা রাফিউর রাফি যাবেন পঞ্চগড়। তিনি গতকাল সোমবার রাতে কমলাপুর স্টেশনে এসে টিকিটের জন্য সারিতে দাঁড়ান। রাফি বলেন, ‘সকাল আটটায় কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। পাশাপাশি একই সময়ে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অ্যাপে প্রবেশ করতে পারিনি। বহু চেষ্টা করেও অ্যাপ থেকে টিকিট কাটতে পারিনি। অনলাইনের টিকিট যে কারা পায় কে জানে। কিন্তু কাউন্টার থেকেই তিনটি টিকিট কিনতে পারলাম।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার রাজধানী থেকে প্রতিদিনের জন্য ২৬ হাজার ৭১৩টি আসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এসব টিকিটের ৫০ শতাংশ রেলস্টেশনের কাউন্টারে এবং ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করা হয়।
কমলাপুরের প্রধান রেলস্টেশন থেকে উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে এবং কমলাপুর শহরতলি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদযাত্রার ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। ৮ জুলাই দেওয়া হবে ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই দেওয়া হবে ১৩ জুলাইয়ের টিকিট, ১১ জুলাই ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। তবে ১১ জুলাই সীমিত কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলাচল করবে।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ৯ জুলাই ঈদের আগের দিন। এদিন ঢাকা থেকে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, খুলনা, বেনাপোলসহ কয়েকটি আন্তনগর গন্তব্যের ট্রেনগুলোতে টিকিট বিক্রি বা চাহিদা খুবই কম। এ কারণেই কাউন্টারগুলোর সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় একদমই নেই।