প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১২:১৯:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা। নিজের নামে রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ। আর তাঁর স্ত্রী রীনা চৌধুরীর নামে রয়েছে ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তাঁদের অঢেল সম্পদের তথ্য-প্রমাণ।
দুদক সূত্র জানায়, পুলিশ বিভাগে চাকরি করার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন সুভাষ চন্দ্র সাহা। দুর্নীতির দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কৌশলে সিংহভাগ সম্পদ রেখেছেন স্ত্রীর নামে। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত।
গত ২৮ আগস্ট সুভাষ চন্দ্র সাহার স্ত্রী রীনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ৩০ আগস্ট সাবেক এই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন। এখন দুদক প্রতিবেদন দুটি খতিয়ে দেখে মামলার অনুমোদন দেবে। এর পরই তাঁদের বিরুদ্ধে করা হবে মামলা।
সস্ত্রীক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর। সুভাষ চন্দ্র সাহা সাম্প্রতিক সময়ে ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে
তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে ন্যস্ত করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, সুভাষ সাহা ও তার স্ত্রীর নামে মোট ১৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৪ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রীনা চৌধুরীর স্থাবর সম্পদ ৩ কোটি ৯ লাখ ২৫ হাজার ১৫৯ কোটি টাকার। অস্থাবর সম্পদ ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার ১০৪ টাকার। এ ছাড়া আরও সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। রীনা চৌধুরীর নামে মোট সম্পদ ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকার। দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৪ টাকার সম্পদ।
সুভাষ চন্দ্র সাহার নামে স্থাবর ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকার ও অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪৭ টাকার। তার নামে মোট সম্পদ ২ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ টাকার।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ সম্পর্কে বক্তব্য জানার জন্য পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহাকে ফোন করা হলে তিনি সমকালকে প্রথমে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। দুদকে তাঁদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ায় কথা জানালে তিনি বলেন, অভিযোগটি অনেক আগের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রীনা চৌধুরী দুদকে পেশ করা সম্পদ বিবরণীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। ওইসব সম্পদের উৎস হিসেবে তার নামীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের কথা বলা হয়েছে। নিজের আয়কর নথিতে অনেক সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি, যেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে। আয়কর নথিতে যেসব সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি, দুদক আইন অনুযায়ী সেগুলোকে উৎসবহির্ভূত সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
অনুসন্ধান সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, দুদকে পেশ করা বিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাহা ট্রেডার্সের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটি একটি নামমাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এ ছাড়া মৎস্য চাষ, মৌসুমি পণ্যের স্টোরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তার সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রীনা চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- জমি, পাঁচ তলা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সম্পদ। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে অলংকারাদি ৫০ হাজার, আসবাব ৫০ হাজার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৩০ হাজার টাকা, একাধিক ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকা রয়েছে। ওয়ান ব্যাংকের ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড শাখা, বংশাল শাখা এবং যশোর শাখায় সুভাষ সাহা ও রীনা চৌধুরীর যৌথ নামে মোট ১৯টি এফডিআরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই সব এফডিআরে সুদসহ মোট ৮ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জমা আছে। ১৯টি এফডিআরে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
রীনা চৌধুরী ২০০৬-২০০৭ করবর্ষে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। তাঁর ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি পর্যালোচনা করে মোট ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ২৩৫ টাকার হিসাব পাওয়া যায়।
দুদকের সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, রীনা চৌধুরী দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট ১০ কোটি ৯৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৭০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় দেখানো হয় ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৩২ টাকা। ২০০৫-২০০৭ থেকে ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি
নিয়মিত কর প্রদান করছেন। তিনি নিজ নামে সর্বমোট ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৪ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। পারিবারিক ব্যয়সহ তাঁর মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৬ টাকার।
দুদকের হিসাব অনুযায়ী, রীনা চৌধুরীর বৈধ আয় ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৩২ টাকার। ওইসব হিসাব অনুযায়ী তাঁর নামের ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৪ টাকার সম্পদ বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।